পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আল আমিনের বিরুদ্ধে সদস্যদের টাকা আত্মসাৎ এবং ঋণ বিতরণের বিপরীতে গচ্ছিত ব্ল্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প ব্যবহারে প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে সদস্যদের হয়রানির অভিযোগও রয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন নাজমা আক্তার, মো. জয়নাল সিকদার, মো, কাসেম, বাদল সিকদার, লিটন সিকদার হিরোন মৃধা ও জসিম আকন। এ সময় ভুক্তভোগী পরিবারসহ শতাধিক এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা জানান, আল আমিনের হয়রানি শিকার হয়ে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে এবং অনেকে এলাকা ছাড়া হয়েছে। তারা আল আমিনের এ হয়রানি থেকে মুক্তি চান এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, সমিতির সভাপতি আল আমীন সমবায় নীতিনালা মেনে সমিতি পরিচালনা করছে। ব্ল্যাংক চেক ও ব্ল্যাংক স্ট্যাম্পের মাধ্যমে নীতিমালাবহির্ভূত ঋণ বিতরণ করেন। যার নিবন্ধন নম্বর-৯০/পিডি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রব বলেন, সমিতির সভাপতি আল আমিনও ইউপি সদস্য। সে কাউকে সম্মান করে না। হঠাৎ টাকার গরম হয়েছে। এক প্রতিবন্ধী তার সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে মারা গেছে। তার পরও সে তা মাফ করেনি। উলটো তার ছেলেকে চাপ দিয়ে জায়গা জমি ও বউয়ের সোনার গহনা বিক্রি করে এক লাখ টাকার বিনিময়ে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়েও ক্ষমা পায়নি। আরও এক লাখ টাকা দাবি করে।
ভুক্তভোগী বাদল সিকদার জানান, আমি মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের একজন সদস্য। আমার টাকার প্রয়োজন হওয়ায় সমিতির কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা লোন নিয়েছি। এই লোন নিতে সমিতির সভাপতি আল আমিন আমার কাছ থেকে স্বাক্ষরিত তিনটি ব্ল্যাংক চেক ও তিনটি স্ট্যাপ গচ্ছিত রাখে এবং বলে লোন পরিশোধ হলে চেক ও স্ট্যাপ দিয়ে দেবে। আমি ছয় লাখ টাকার প্রতি মাসে বারো হাজার টাকা করে সুদ দিয়ে এবং ১৪ মাসে লোনের টাকা পরিশোধ করে দিই। লোন পরিশোধ হওয়ার পর সমিতির কাছে গচ্ছিত রাখা আমার ব্ল্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প দেব দেব বলে ফেরত দেয়নি আল আমিন। পরে আমার কাছ থেকে মোটা অঙ্কেও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য আল আমিন তার ভায়রা বেল্লালকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার করে সাড়ে ২০ লাখ টাকার মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। টাকা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করছে। এখন আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে আল আমিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ভুয়া। আমার সমিতিতে চাকরি করত, সমিতির টাকা তসরুপ করে ধরা পড়ার পরে চেক দিয়েছেন। সে চেক ডিজঅর্নার হয়ে মামলা হয়েছে। সে জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে এখন আমার বিরুদ্ধে এসব করছেন।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলামের কাছে মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানান, এই সমিতির সভাপতি আল আমিনের বিরুদ্ধে চেক ও স্ট্যাম্প নিয়ে জালিয়াতি করার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা সমবায় কর্মকর্তা পঙ্কজ কুমার চন্দ বলেন, প্রতিটি সমিতিরই নিয়মকানুন আছে। সমিতির সদস্যদের জমা টাকার ৮০ শতাংশ পরিমাণ টাকা লোন গ্রহণ করতে পারবে। কোনো সমিতি যদি অনিয়ম করে তা হলে তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড যদি কোনো অনিয়ম করে, তবে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।