প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেছেন, ‘আমি অসুস্থ নই। আমি সাময়িকভাবে যাচ্ছি। আবার ফিরে আসব। বিচার বিভাগ যেন বিব্রত না হয়। আমার ধারণা, সরকারকে ভুল বোঝানো হয়েছে।’ শুক্রবার রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার আগে হেয়ার রোডের বাসার সামনে বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
তিনি বিমানবন্দরে যাওয়ার উদ্দেশে রাত ৯টা ৫৬ মিনিটে বাসা থেকে বের হন। বের হওয়ার সময় গেটের বাইরে গাড়ি থেকে নেমে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি এক পৃষ্ঠার একটি লিখিত বক্তব্যের কপি সাংবাদিকদের হাতে দিয়ে যান। তার স্বাক্ষরিত বক্তব্যটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হল-
‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। কিন্তু ইদানীং একটা রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী ও বিশেষভাবে সরকারের মাননীয় কয়েকজন মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন এতে আমি সত্যিই বিব্রত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারের একটা মহল আমার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে পরিবেশন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন, যা অচিরেই দূরীভূত হবে বলে আমার বিশ্বাস। সেই সঙ্গে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আমি একটু শঙ্কিতও বটে। কারণ গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবীণতম বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে মাননীয় আইনমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অচিরেই সুপ্রিমকোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনবেন। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো রেওয়াজ নেই। তিনি শুধু রুটিনমাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।’
এর আগে প্রধান বিচারপতি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আমি অসুস্থ না। আমি চলে যাচ্ছি। আমি পালিয়েও যাচ্ছি না। আমি আবার ফিরে আসব। আমি একটু বিব্রত। আমি বিচার বিভাগের অভিভাবক। বিচার বিভাগের স্বার্থে, বিচার বিভাগটা যাতে কলুষিত না হয়, এ কারণেই আমি সাময়িকভাবে যাচ্ছি। আমার কারও প্রতি কোনো বিরাগ নেই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারকে ভুল বোঝানো হয়েছে। এই আমার বক্তব্য আর কিছু বলব না। আমি লিখিত বক্তব্য দিচ্ছি। এই হল আমার লিখিত বক্তব্য। পরে তিনি বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন।