বিপুল বিনিয়োগের বিনিময়ে বিদেশিদের স্থায়ী বসবাসের অনুমতি, তথা ‘গোল্ডেন ভিসা’ কর্মসূচি বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়া। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে চালু করা হয়েছিল এই কর্মসূচি। কিন্তু প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়ায় সেটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলীয় সরকার। গোল্ডেন ভিসার পরিবর্তে এখন দক্ষ কর্মী ভিসা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
সমালোচকরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছেন, ‘গোল্ডেন ভিসা’ কর্মসূচির মাধ্যমে ‘দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা’ তাদের ‘অবৈধ অর্থ’ বিদেশে জমা করেন।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১২ সালে চালু হওয়ার পর থেকে কয়েক হাজার মানুষ অস্ট্রেলিয়ার ‘সিগনিফিকেন্ট ইনভেস্টর ভিসা’ (এসআইভি) পেয়েছেন। এই ভিসার জন্য সফল আবেদনকারীদের মধ্যে ৮৫ শতাংশই হলেন চীনা নাগরিক।
অস্ট্রেলিয়ায় এসআইভি তথা গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার জন্য বিদেশি নাগরিকদের ন্যূনতম ৫০ লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার বিনিয়োগ করতে হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩৬ কোটি ১০ লাখ টাকারও বেশি।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও’নিল বলেছেন, সরকার একাধিকবার পর্যালোচনা করে দেখেছে, এই কর্মসূচি তার মূল উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে গত ডিসেম্বর থেকে সেটি বাতিল করা হয়েছে। এর পরিবর্তে অস্ট্রেলিয়ায় ‘অতিরিক্ত অবদান রাখতে সক্ষম’ দক্ষ অভিবাসীদের জন্য আরও ভিসার সুযোগ তৈরি করা হবে।
অস্ট্রেলীয় মন্ত্রী বলেছেন, এটি (গোল্ডেন ভিসা) কয়েক বছর ধরেই আমাদের দেশ ও অর্থনীতির জন্য যা প্রয়োজন, তা দিতে পারছিল না।
দেশটির এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী ক্ল্যান্সি মুর। তিনি বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ক্লেপটোক্র্যাটরা অস্ট্রেলিয়ায় তাদের অবৈধ অর্থ জমা করা এবং নিজেদের অপরাধ লুকানোর জন্য গোল্ডেন ভিসাকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করছিলেন।
এর আগে, ২০২২ সালে অতিধনীদের জন্য তথাকথিত গোল্ডেন ভিসা বাতিল করে যুক্তরাজ্য। ইউরোপের দেশ মাল্টায়ও গোল্ডেন ভিসা কর্মসূচি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। দেশটি মোটা টাকার বিনিময়ে অ-ইউরোপীয় নাগরিকদের নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে।
২০২২ সালের এক তদন্তে দেখা যায়, দ্বীপরাষ্ট্রটিতে মাত্র কয়েকদিন থেকেই নাগরিকত্ব পাচ্ছিল মানুষজন। এ সময় অর্থপাচার, কর ফাঁকি এবং দুর্নীতির ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন।