ভারতীয় হাইকমিশনের সুধী সমাবেশে সুষমা স্বরাজ
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, বাংলাদেশ সবার আগে। ভারত সব প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাংলাদেশকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। গতকাল সোমবার সকালে বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনে নতুন চ্যান্সারী ভবন ও ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ বক্তব্য দেন।
সুষমা স্বরাজ প্রতিবেশীদের ভারত সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। ইংরেজী ও হিন্দিতে দেওয়া ২০ মিনিটের বক্তৃতা দর্শক স্রোতারা তুমুল করতালি আর হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে উপভোগ করেন। বাংলাদেশের প্রতি ভারত সরকারের অগ্রাধিকার নীতি বুঝাতে সুষমা হিন্দিতে বলেন, ‘পড়শি পেহেলে লেকিন বাংলাদেশ সবচে’ পেহেলে।’
ভারতীয় হাইকমিশনের চ্যান্সারী কমপ্লেক্সে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. এস জয় সংকর, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী প্রমুখ। ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
সুষমা স্বরাজ দু’দিনের ঝটিকা সফরে রবিবার দুপুরে ঢাকা আসেন এবং গতকাল দুপুরে নয়াদিল্লী ফিরে যান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমরা দু’জন দাদা আর দিদির সম্পর্ক পাতিয়ে ফেলেছি।’ বাংলাদেশ ও ভারতের বর্তমান সম্পর্ক অসাধারণ। দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো সমাধান হবে। দুই পক্ষই বন্ধুত্বের মেজাজে সঠিক পথে কাজ করছে। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি দুই দেশ মিলে সব বিষয় ইমানদারির সঙ্গে মিটিয়ে ফেলব। ইতিমধ্যে আমরা সমুদ্রসীমা আর স্থল সীমান্ত নিয়ে বিরোধী শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিষ্পত্তি করেছি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনা আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের শক্ত ভিত্তি দিয়েছেন, যা দিনে দিনে সহযোগিতার হাত ধরে সম্প্রসারিত হচ্ছে। আগামীতে এই সম্পর্ক বৃহত্তর উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছবে, আমি নিশ্চিত।
দুই দেশের জনগণের মধ্যে নিবিড় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কয়েক বছরে জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। প্রতিবছর সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি ভারত সফরে যাচ্ছেন। এ বছর ১৪ লাখ বাংলাদেশিকে ভিসা দেওয়া হতে পারে। ২০১৬ সালে ছিল সাড়ে নয় লাখ আর ২০১৫ সালে সাড়ে সাত লাখ।
তিনি আরো বলেন, দুই দেশের তরুণ সমাজই বড় শক্তি ও সম্পদ। তরুণদের উপর বেশি বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। তরুণরাই হলো ভবিষ্যত্। ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশ সজাগ ও সচেতন। তিনি সব সময় বাংলাদেশ বিষয়ে বিশেষ নজর দিয়ে থাকেন।
ভিসা প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করার জন্য তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরই নির্দেশ দেন। যার ফলশ্রুতিতে আজ সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি ভারত যেতে পারছে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের সময়ে দু’দেশের সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চলছে। বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ আর্থিক ৮ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১১০ কোটি টাকার অনুদানে ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। আগামী দুই বছরে ১১০ কোটি টাকার অনুদানে ৬০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ৭১ কোটি টাকার অনুদানে ১৫টি প্রকল্প ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ হবে।
অনুষ্ঠানে বীরশ্রেষ্ঠ ‘নূর মোহাম্মদ কলেজের ছাত্রীরা মনোজ্ঞ সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে। ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইনস্টিটিউট ও সংস্কৃত বিভাগকে কম্পিউটার, বই ও শিক্ষা সরঞ্জাম উপহার দেন সুষমা স্বরাজ।