কাজী বাবলা,(পাবনা) প্রতিনিধি॥
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারীদের হাতে শিক্ষক লাঞ্চিত হবার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। এসময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সহ ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। শনিবার বেলা ১১ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত দফায় দফায় এই সংঘর্ষ চলে। ক্যাম্পাসে চরম উত্তোজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক অনুষদ বিভাগের ডিন পদ থেকে ড. আব্দুল আলীমকে অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি।
পাবনা সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় তুচ্ছ ঘটনায় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ড. আব্দুল আলীম এক কর্মচারীর হাতে লাঞ্চিত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার বেলা ১১ টার দিকে শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী লিটনের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। পরে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর হামলা চালায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামসহ ৪/৫ জন আহত হয়। পরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংগঠিত হয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করতে গেলে ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। শুরু হয় দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ। দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের প্রায় ২০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে ৮ জনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হলেন, সেকশন অফিসার রফিকুল ইসলাম, তৌফিকুর রহমান সৈকত, সিনিয়র স্টোর কিপার জামসেদ হোসেন পলাশ, নিরাপত্তা প্রহরী লিটন হোসেন, জনি, বাংলা বিভাগের মাস্টার্স শেষপর্বের ছাত্র আবু জাফর, শামীম হোসেন ও সাইফুল ইসলাম। সংঘর্ষের সময় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু হল এবং প্রায় ৩০টি মোটর সাইকেল সহ ব্যাপক ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির সভাপতি শামস সাদ ফকরুল জানান, শিক্ষকদের উস্কানীতে একদল শিক্ষার্থী এসে আমাদের কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালায়। এ সময় কর্মকর্তা কর্মচারীরা বাধা দিতে গেলে তারা সংগঠিত হয়ে আবারও এসে আমাদের উপর হামলা করে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এ সময় তারা কর্মকর্তাদের প্রায় ৩০টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে। এসময় আমাদেও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী আহত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে বসে সুরহা করার চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের অনেক সম্পদ নষ্ট করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক অনুষদ বিভাগের ডিন পদ থেকে ড. আব্দুল আলীমকে অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সুত্র জানায়, শুক্রবার পাবিপ্রবির প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ড. এম আব্দুল আলীমের সাথে গেটের নিরাপত্তাকর্মিদের বাকবিতান্ডার ঘটনা ঘটে। এরই এক পর্যায়ে নিরাপত্তা কর্মিরা সংঘবদ্ধ হয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে ড. আলীমের উপর হামলা চালিয়ে তাকে লাঞ্চিত করে। এ ঘটনা ঐদিন রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে মারপিট ও লাঞ্ছিতের খবর জানতে পেরে শনিবার বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষকও শিক্ষার্থীদের পাশে অবস্থান গ্রহণ করে। এ খবর পেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাঠিসোঠা নিয়ে অবস্থানকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় উভয় গ্রপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ৩য় শ্রেনীর কর্মচারী হয়ে একজন সম্মানিত শিক্ষকের শরীরে হাত তুলছে, এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি। শিক্ষককে লাঞ্চিত করার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা শান্তি পূর্ণ ভাবে শিক্ষক লাঞ্চনার কর্মসূচী পালন করছিলাম। কর্মচারীরা আমাদের উপর হামলা করলে এ খবর পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পরলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। এ ব্যাপারে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের প্রক্টর আওয়াল কবির জয় বলেন, দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জরুরী বৈঠক আহবান করা হয়েছে। বৈঠকে একটি তদন্ত কমিটি ঘঠন করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে যারা এই ঘটনায় জড়িত রয়েছে তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেওয়া হবে। বিচারের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা আজকের জন্যে কর্মসূচী সমাপ্ত করেছে বলেও দাবী করেন প্রক্টর।