গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস তাতে সাড়া দিয়েছে ইসরাইল।
হামাস নেতা খলিল আল হায়য়া শনিবার কাতার থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে আল-জাজিরা ও রয়টার্স।
বিবৃতিতে হামাসের আঞ্চলিক রাজনৈতিক ব্যুরোর মুখপাত্র খলিল আল হায়য়া বলেন, ‘গত ১৩ এপ্রিল মিসর ও কাতারের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিলো, তাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়া দিয়েছে ইহুদি দখলদার শক্তি।’
হামাস বলেছে, ইসরাইলের সাড়া দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো জবাব দেওয়ার আগে তারা দেশটির পাঠানো নথি পর্যালোচনা করছে।
তবে বিবৃতিতে ইসরাইলের প্রতিক্রিয়ায় কী কী বলা হয়েছে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে ইসরাইলের ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালায় হামাস। তাদের হামলায় এক হাজার ২০০ জন ইসরাইলি ও অন্য দেশের নাগরিক নিহত হন। সেই সঙ্গে জিম্মি করা হয় আরও ২৪০ জনকে।
হামাসের হামলার জবাবে সেই দিন থেকেই গাজায় তীব্র আক্রমণ শুরু করে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ। গত ছয় মাস ধরে চলমান সেই অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। নিহত হয়েছেন ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহতদের অধিকাংশই শিশু, নারী ও বেসামরিক লোকজন।
কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতিয়ালিতে গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অস্থায়ী বিরতি ঘোষণা করেছিলো হামাস-আইডিএফ। সেই বিরতির সময় নিজেদের কব্জায় থাকা জিম্মিদের মধ্যে ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিলো হামাস। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে থেকে ১৫০ জনকে কারাগার থেকে ছেড়ে দিয়েছিলো ইসরাইলও।
ওই বিরতি শেষ হওয়ার পর গাজায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করছিলো মধ্যস্থতাকারী তিন দেশ। চলতি বছর রমজান মাস থেকে তা শুরু হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু মূলত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর আপত্তির কারণে তা আর হয়নি।
কাতার এবং মিসরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাকি জিম্মিদের মুক্তির জন্য প্রথম দফা বিরতির পর দ্বিতীয় বার যুদ্ধবিরতির জন্য একাধিক বার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে হামাস এবং ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার কাছে। কিন্তু প্রতিটি প্রস্তাবে হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে এবং এই দাবির কারণে সেসব প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি ইসরাইল।
দুই পক্ষের মতানৈক্যের কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসন এবং জিম্মিদের মুক্তির পথ তৈরি করতে শুক্রবার ইসরাইল সফরে যায় মিসরের একটি সরকারি প্রতিনিধি দল।
মিসরের প্রতিনিধিদলের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইসরাইলের কাছে নতুন কোনো প্রস্তাব নেই। তবে তারা সীমিত যুদ্ধবিরতির বিষয়টি বিবেচনা করতে আগ্রহী, যেখানে ৪০ জন জিম্মির পরিবর্তে ৩৩ জনকে মুক্তি দেবে হামাস।
হামাসের কব্জায় থাকা জিম্মিদের মুক্তির জন্য গোষ্ঠীটির প্রতি আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয় যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ ১৭টি দেশ। ১৭টি দেশের চিঠি প্রসঙ্গে প্রাথমিক এক প্রতিক্রিয়ায় হামাস নেতারা বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক চাপের কাছে তারা মাথা নত করবেন না।
তবে কয়েক ঘণ্টা পরই তারা ফের বলেন, ‘ফিলিস্তিনের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ যে কোনো প্রস্তাবকে হামাস স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।’