তাপদাহে পুড়ছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমার। চলতি মাসেই সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দেশটিতে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ গতকাল সোমবার এতথ্য জানায়। দ্যা স্ট্রেইট টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিন ধরেই মিয়ানমারে প্রচণ্ড তাপদাহ বয়ে বেড়াচ্ছে। গত রোববার (২৮ এপ্রিল) মধ্য মিয়ানমারের ম্যাগওয়ে অঞ্চলের চাউক শহরে ৪৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
৫৬ বছর আগে মিয়ানমারে তাপমাত্রা রেকর্ড রাখা শুরু হয়। দেশটির আবহাওয়া অফিসের একটি বিবৃতি অনুসারে, রেকর্ড শুরু হওয়ার বছরে পর এই প্রথম কোনো এপ্রিল মাসে এত বেশি তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে মিয়ানমারে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) বাণিজ্যিক কেন্দ্র ইয়াঙ্গুনে ৪০ ডিগ্রি ও মান্দালে শহরে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এপ্রিলে সাধারণত যে গড় তাপমাত্রা থাকে, তা থেকে গত বৃহস্পতিবারের তাপমাত্রা ছিল ৩–৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেশি।
ম্যাগওয়ে অঞ্চলের চাউক শহরের এক বাসিন্দা বলেন, এখানে এত বেশি গরম পড়ছে, আমরা বাড়িতেই অবস্থান করছি। তীব্র তাপদাহে আমরা কার্যত কিছুই করতে পারি না। গত বছর বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বলেছে, বিশেষ করে এশিয়া দ্রুতগতিতে উষ্ণ হয়ে উঠছে, আর এর প্রভাবও গুরুতর হয়ে উঠছেে।
এদিকে তীব্র দাবদাহে পুড়ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে।
তীব্র দাবদাহে এসব দেশের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেশে দেশে স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। চাপ বাড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর। ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় চলতি সপ্তাহেই তাপমাত্রা ৩৮ ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়, যা ১৯১৫ সালের পর রেকর্ড। এ অবস্থায় দেশটিতে দুদিনের জন্য স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কম্বোডিয়ার সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া দফতর। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গরমে স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। অন্যদিকে, ভিয়েতনামে তীব্র দাবদাহের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তীব্র দাবদাহ চলছে। অনেক জায়গায় তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি। প্রতিবেশি মিয়ানমারে রোববার তাপমাত্রা ওঠে ৪৮.২ ডিগ্রি সেলিয়াস, যা দেশটির ৫৬ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এছাড়া থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা প্রতিদিনই বাড়ছে। দেশটির আবহাওয়া বিভাগ নাগরিকদের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে জারি করেছে সতর্কতা।
বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের তাপমাত্রার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ও এল নিনোর প্রভাবকে দায়ী করা হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, দাবদাহ দীর্ঘস্থায়ী, তীব্র ও বারবার হতে পারে।