চলতি বছরের অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হয়েছে গতকাল বুধবার। এ বছর সাধারণ ৮টি বোর্ড ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮২০ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৫৬ হাজার ৪৫ জন। ২০১৬ সালে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার্থী ছিল ২৪ লাখ ১২ হাজার ৭৭৫ জন। প্রথম দিনে জেএসসিতে বাংলা প্রথমপত্র এবং জেডিসিতে কুরআন মাজিদ ও তাজবিদ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে জেএসসি বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় ৬০ হাজার ৮৯৩ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। আর পরীক্ষায় নানা অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ১৬ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নৌকাডুবির কারণে জেএসসির প্রথম পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার প্রায় অর্ধশত পরীক্ষার্থীর ফের পরীক্ষা নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় নিয়ে এসব পরীক্ষার্থীর জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ এবং পরীক্ষাকে নির্বিঘœ করতে পরীক্ষার শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র প্রবেশ করানো, কেন্দ্র সচিব ছাড়া ছবি তোলা যায় এ ধরনের মোবাইল নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ না করাসহ ১০ দফা নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এদিকে আজ জেএসসিতে বাংলা দ্বিতীয়পত্র এবং জেডিসিতে আকাইদ ও ফিকহ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেএসসি ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত জেডিসি পরীক্ষায় মোট ২৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮২০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে ছাত্র ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৭৮ এবং ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৪২ জন ছাত্রী। ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৪ জন বেশি। আর গত বছরের তুলনায় এবার মোট পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৫৬ হাজার ৪৫ জন বেশি। এবার সারাদেশে ২৮ হাজার ৬২৮টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দুই হাজার ৮৩৪টি কেন্দ্রে অংশগ্রহণ করবে। একই সময়ে বিদেশের নয়টি কেন্দ্রে এবার ৬৫৯ জন শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, জেএসসিতে মোট পরীক্ষার্থী ২০ লাখ ৯০ হাজার ২৭৭ জন। তার মধ্যে ছাত্র ৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৬ জন এবং ছাত্রী ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯৪১ জন।
অন্যদিকে জেডিসিতে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৫৪৩ জন। তার মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৭৩ হাজার ৪২২ জন ও ছাত্রী ২ লাখ ৫ হাজার ১০১ জন রয়েছে। দেশের বাইরের নয়টি কেন্দ্রে এবার ৬৫৯ জন জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। জেএসসিতে এবার ৯৬ হাজার ২১২ জন এবং জেডিসিতে ১৪ হাজার ৩৬৭ জন অনিয়মিত পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। গত বছর এক থেকে তিন বিষয়ে যারা অকৃতকার্য হয়েছিল তারাও এবার পরীক্ষা দেবে। এই সংখ্যা জেএসসিতে ৮৭ হাজার ৬৯৭ জন; জেডিসিতে ১১ হাজার ৭৭০ জন। এবারও বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র ছাড়া অন্য বিষয়ের পরীক্ষা সৃজনশীল প্রশ্নে নেয়া হবে। জেএসসি- জেডিসিতে এবার থেকে শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, কর্মমুখী শিক্ষা এবং চারুকলা বিষয়ের পরীক্ষা হবে না। বছরজুড়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে এসব বিষয়ের নম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বোর্ডে সরবরাহ করা হবে। এবার নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের চতুর্থ বিষয়সহ ১০টি পত্রে ৮৫০ নম্বরের পরীক্ষায় বসছে শিক্ষার্থীরা। বহু নির্বাচনী ও সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে দু’টি বিভাগ থাকলেও দু’টি অংশ মিলে ৩৩ পেলেই পাস বলে গণ্য হবে, অর্থাৎ এসএসসির মতো দুই অংশে আলাদাভাবে পাসের প্রয়োজন নেই। শ্রবণ প্রতিবন্ধীসহ অন্য প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা বরাবরের মতোই অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাচ্ছে। অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম ও সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধীরা পায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই তারা শ্রæতি লেখক সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
এদিকে বিগত দিনের পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল। পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরও আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষকরাই যদি প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত থাকেন তাহলে কাদের ওপর ভরসা করব। এ ধরনের কাজে যারা জড়িত তারা শিক্ষক নামের কলঙ্ক। তিনি প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত এবং কঠিন শাস্তির কথাও বলেন। সে অভিজ্ঞতা থেকেই এবার বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সুফলও এসেছে সেই ব্যবস্থা থেকে। এবার পরীক্ষার প্রথম দিনে প্রশ্ন ফাঁসের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রশ্ন ফাঁস রোধে এবং পরীক্ষাকে নির্বিঘœ করতে পরীক্ষার শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করার নির্দেশনা দেয়। এছাড়াও কেন্দ্র সচিব ছাড়া ছবি তোলা যায় এ ধরনের মোবাইল নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ না করা, সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধসহ ১০ দফা নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এর মধ্যে পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁস যাতে না হয় এ জন্য পাবলিক পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করা বাধ্যতামূলক করা হয়। তবে বিশেষ কারণে কারো দেরি হলে তা বিবেচনা করার কথাও জানায় মন্ত্রণালয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন বলেন, নির্দেশনাটি বাধ্যতামূলক সকলকেই মানতে হবে। তবে ব্যতিক্রম কিছু হলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই সেটা কার্যকারণ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। কেউ একটা অ্যাক্সিডেন্টে পড়ে গেল সেক্ষেত্রে তো আপনাকে বিবেচনা করতে হবে, সে রকম ব্যতিক্রম থাকবে। সকল ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম থাকে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষকরা সকালে যাওয়ার পর প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। এটা বন্ধ করার জন্য পরীক্ষার্থীরা ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করবে, পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করার পরই প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা হবে। যেহেতু শিক্ষার্থীদের সাথে অন্য কোনো মাধ্যম থাকবে না, তাই পরীক্ষার হলে ঢোকার পর কমিউনিকেশন থাকছে না। কেউ যদি অসাধু পন্থায় কিছু করতেও চায়, সেই সুযোগটা আর পাচ্ছে না।
নৌকাডুবিতে আহত জেএসসি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবে
নৌকাডুবির কারণে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার প্রথম দিনে অংশ নিতে না পারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার প্রায় অর্ধশত পরীক্ষার্থী ফের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় নিয়ে এসব পরীক্ষার্থীর জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্য বিষয়ের পরীক্ষা শেষে বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের পরীক্ষা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ মহিউদ্দীন খান বলেন, নৌকাডুবির কারণে দুইজন পরীক্ষার্থী মারা গেছে এবং কয়েক জন নিখোঁজ রয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মর্মাহত। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। যারা মারা গেছে তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণত পরীক্ষায় অংশ না নিলে অনুপস্থিত ধরা হয়। দুর্ঘটনার কারণে যারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি মানবিক কারণে তাদের ব্যাপারে বিশেষ বিবেচনা করা হবে।
গতকাল বিকালে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল খালেক বলেন, দুর্ঘটনার খবর শুনে সেখানে ছুটে গিয়েছিলাম। নিহত ও আহত পরীক্ষার্থীর স্বজনদের সমবেদনা জানিয়েছি। নৌকাডুবির কারণে প্রথম দিনের (বাংলা প্রথমপত্র) পরীক্ষায় ১৮ জন অংশ নিতে পারেনি। তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বোর্ডের পক্ষে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছেন জানিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এ ব্যাপারে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ বলেন, দুর্ঘটার কারণে যারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি তাদের বিষয়ে বোর্ড সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আমরা বিষয়টি মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেয় আমরা তা বাস্তবায়ন করব। তিনি আরো বলেন, মন্ত্রণালয় পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত দিলে অন্য পরীক্ষা শেষে আলাদা সেটের প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হবে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নবীনগর উপজেলায় কৃষ্ণনগর এলাকার তিতাস নদীতে একটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এতে বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের দুইজন জেএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়। আহত হয়েছে আরো অর্ধশতাধিক।
জেএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে
অনুপস্থিত ৪২৫৭ জন পরীক্ষার্থী
দিনাজপুর অফিস : দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় অনুষ্ঠিত জেএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন সুষ্ঠ, ত্রæটিমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ মানিক হোসেন জানান, বুধবার জেএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে বোর্ডের ২৫৯টি কেন্দ্রে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় ২ লাখ ২১ হাজার ৭২ জন। বাংলা প্রথম পত্রে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ হাজার ২৫৭ জন। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে প্রত্যেকটি পরীক্ষা কেন্দ্রের বাহিরে ২০০ গজ পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা বলবৎ ছিল। বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ নিষেধ করা হয়েছিল। ফলে পরীক্ষার প্রথম দিন সুষ্ঠু, ত্রæটিমুক্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন পরীক্ষার্থী এবং কোন পরীক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষক বহিস্কার হয়নি। পরীক্ষা তদারকির জন্য ৭টি ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়। এর মধ্যে বোর্ডের নিজস্ব কর্মকর্তাদের সমন্বয় ৪টি এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সমন্বয়ে ৩টি টিম ছিল।
উল্লেখ্য যে, গত বছর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ২৫০টি কেন্দ্রে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৫১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২ লাখ ৮ হাজার ৫৫২ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করেছিল। গতবার অনুপস্থিত ছিল ৩ হাজার ৫৯৯ জন পরীক্ষার্থী।