ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন চালানো দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করেছে তুরস্ক। এটিকে তেল আবিবের বিরুদ্ধে একটি জোরালো পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২ মে) রাতে তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেয়। তারা বলেছে, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনে আগ্রাসন চালানোর কারণে ইসরায়েলে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি স্থগিত করা হয়েছে। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
বিবিসি অনলাইনের খবর অনুসারে, গত ২০২৩ সালে দুদেশের মধ্যে ৭ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়।
আধিপত্যবাদী ইসরায়েলকে সতর্ক করার অংশ হিসেবে গত ৯ এপ্রিল সেদেশে ৫৪ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল তুরস্ক। সেটি স্মরণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ওই পদক্ষেপের পরও ইসরায়েল তাদের আগ্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে এবং যার ফলে ফিলিস্তিনে মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে।
তুরস্ক সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইসরায়েলের চালিয়ে যাওয়া হামলায় ফিলিস্তিনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের ১৫ হাজারই শিশু। এছাড়া আরও ৭৮ হাজারের বেশি শিশু আহত হয়েছে। এদের অনেকে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে।
বছরের পর বছর ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে হুইদী বসতি গড়ে তোলা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাস বহুদিন ধরে ক্ষুব্ধ ছিল। এর মধ্যে আল আকসা মসজিদসহ বিভিন্ন এলাকায় ফিলিস্তিনিদের হত্যা, চরম নির্যাতন ও দমন-পীড়নের জবাব দিতে ৭ অক্টোবর আকস্মিক ইসরায়েলে হামলা করে বসে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এতে দেশটিতে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২০০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এছাড়া ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা।
ওই আক্রমণের জবাব দিতে গাজায় নির্বিচারে বিমান হামলা চালাতে থাকে ইসরায়েলি বাহিনী। বেসামরিক স্থাপনা, এমনকি হাসপাতাল, আশ্রয় কেন্দ্র, শরণার্থী শিবিরেও চলতে থাকে তাদের বোমা হামলা। নিষ্পাপ-নিরীহ শিশুসহ হাজার হাজার বেসামরিক লোকের প্রাণহানি হতে থাকলে কাতার, মিশরসহ কিছু দেশ উদ্যোগ নিয়ে কয়েকদিনের জন্য যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করে দুপক্ষকে। কিন্তু যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল আর থামছেই না। এই পরিস্থিতিতে গাজা পরিণত হয়েছে মৃত্যু উপত্যকায়।
প্রথম দিন থেকেই তুরস্ক এই সংঘাত বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে আসছে উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এত কিছুর পরও ইসরায়েল গণহত্যা, মানবাধিকার বিপর্যয় ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে তারা যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে অবজ্ঞা করেছে এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমেও বাধা দিচ্ছে।
যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েল নির্বিঘ্নে পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তায় কার্যক্রম চালাতে দেবে না, সে অবধি তাদের বিরুদ্ধে তুরস্ক এই পদক্ষেপ (আমদানি-রপ্তানি বন্ধ) কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।