অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল ভিনিসিয়ুস জুনিয়র বনাম মানুয়েল নয়্যার লড়াই। তাদের দুজনের কেউই একজন হওয়ার কথা ম্যাচের নায়ক।
তবে ভিনিসিয়ুস বা নয়ার নন, চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের নায়ক বদলি নামা হোসেলু। ৩৪ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারই এক গোলে পিছিয়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদকে ৩ মিনিটের মধ্যে এনে দিলেন দুই গোল। শেষ দিকের মহামূল্যবাণ যে দুটি গোল রিয়ালকে তুলে দিয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে।
খেলা শেষ হওয়ার ৯ মিনিট আগে বদলি নামা জোসেলু কয়েক মিনিটের ব্যবধানে করলেন জোড়া গোল। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্প তৈরি করে ফাইনালে উঠে গেলো রিয়াল। বুধবার সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ২-১ গোলে জিতে ৪-৩ গোলের অগ্রগামিতায় ওয়েম্বলির টিকিট কাটলো রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নরা।
আগামী ১ জুন ১৫তম শিরোপার লক্ষ্যে মাঠে নামবে রিয়াল। সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। মঙ্গলবার তারা পিএসজিকে বিদায় করে ফাইনালে নাম লেখায়।
প্রথমার্ধে ভাগ্য অনুকূলে না থাকায় এবং দুই গোলকিপারের বাধায় কোনও দলই গোলের দেখা পায়নি। গোলের প্রথম প্রচেষ্টা করে বায়ার্ন, সাত মিনিটে সার্জ গিন্যাব্রির শট যায় গোলবারের পাশ দিয়ে। তবে ম্যাচের প্রথম সুবর্ণ সুযোগ পায় রিয়াল। ১৪ মিনিটে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের শট পোস্টে লেগে তাদের হতাশ করে।
২৮ মিনিটে হ্যারি কেইনের চমৎকার ভলি বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে সেভ করেন রিয়াল কিপার আন্দ্রি লুনিন। বিরতির আগে ভিনিসিয়ুসের বাঁ দিক থেকে নেওয়া শট রুখে দিয়ে রিয়ালকে হতাশায় ডোবান ন্যয়ার। তাতে প্রথমার্ধ শেষ হয় কোনও গোল ছাড়া।
বিরতির পর দ্বিতীয় মিনিটে আলফোনসো ডেভিসের শট বারের ওপর দিয়ে যায়। ৫৩ মিনিটে কেইনকে রুখে দেন লুনিন।
দুই মিনিট পর রদ্রিগোর শট গোলপোস্টের কয়েক ইঞ্চি সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায়। চার মিনিট পর ফ্রি কিক থেকে রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান তারকার শট রুখে দেন ন্যয়ার। পরের মিনিটে ভিনিসিয়ুসের শট ডাইভ দিয়ে ঠেকান বায়ার্ন কিপার।
বায়ার্নও সুযোগ তৈরি করে কিছুক্ষণ পর। ৬৬ মিনিটে মুসিয়ালাকে প্রতিহত করেন রিয়াল কিপার লুনিন। দুই মিনিট পর রিয়ালের গ্যালারি নিস্তব্ধ করে দেন ডেভিস। কেইনের বাড়ানো বল পায়ে নিয়ে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে রকেট গতির শটে জাল কাঁপান তিনি। চ্যাম্পিয়নস লিগে তার প্রথম গোলে উল্লাসে মাতে বায়ার্ন।
রিয়াল কয়েক মিনিট পরই গোল শোধ দেয়। কিন্তু তাদের কপাল খারাপ ছিল। ৭২ মিনিটে ওই গোল বিল্ড আপের সময় স্বাগতিক দলের অধিনায়ক নাচো মিউনিখের কিমিখকে ফাউল করেন। ভিএআরে গোলটি বাতিল হয়।
লম্বা সময় ধরে ন্যয়ার গোলপোস্ট অক্ষত রেখে বীরের মর্যাদা পাওয়ার খুব কাছে ছিলেন। কিন্তু ভুল করে বসেন তিনি ৮৮ মিনিটে। ভিনিসিয়ুসের শটে বল তার মুখ-বুকে লেগে হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। সামনেই ছিলেন জোসেলু। এস্পানিওল থেকে ধারে খেলতে আসা এই ফরোয়ার্ড আলতো টোকায় জালে বল জড়ান। সমতায় ফেরে মাদ্রিদ ক্লাব।
ওখানেই শেষ নয়। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে অ্যান্টনিও রুডিগারের গোলমুখেল সামনে বাড়ানো বল জালে ঠেলে দেন জোসেলু। সঙ্গে সঙ্গে অফসাইডের বাঁশি বাজলে খেলোয়াড়দের বিরোধিতার মুখে ভিএআর দেখার সিদ্ধান্ত নেন রেফারি। রিপ্লেতে অনসাইডেই দেখা যায় জোসেলুকে। শুরুর উচ্ছ্বাস লাইন্সম্যানের বাঁশিতে থেমে গেলেও আবার উদযাপনে মাতেন তিনি।