যুক্তরাষ্ট্রের মতো দলের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচ হারের পর হতাশ হয়েছে পুরো বাংলাদেশের মানুষ। জয়ের খুব কাছে গিয়েও শেষ পর্যন্ত খালি ফিরতে হয়েছে টাইগাররা। দুই ম্যাচেই টপ অর্ডার ব্যাটাররা হয়েছেন ব্যর্থ। ক্রিকেটারদের এমন পারফরম্যান্সকে বেদনাদায়ক, দুঃখজনক ও হতাশার বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।
শনিবার (২৫ মে) মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে লিপু বলেন, প্রথম ম্যাচে কেউ কি ভেবেছিলেন ৪ ওভারে ৫৫-৬০ রান ডিফেন্ড করতে পারবে না? প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডার ব্যর্থ ছিল। রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ)-হৃদয় ছাড়া কেউ রান করতে পারেনি, এ কারণে চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন জায়গা।
‘দুই দিন টর্নেডোর কারণে প্র্যাকটিসও করতে পারেনি। এ ছাড়া আগে থেকেই কিছু ব্যাটার অফ ফর্মে থাকায় চাপ তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচে আতঙ্কিত পরিস্থিতির কারণে ব্যাটিং করতে পারেনি বাংলাদেশ। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করলে ম্যাচটা সহজেই জিততে পারতাম। সিরিজ হার খুবই বেদনাদায়ক, দুঃখজনক, হতাশার।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে এই হার বিশ্বকাপে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে লিপু বলেন, বিশ্বকাপের মিশন তো এখনও শুরুই হয়নি। একটা সিরিজ খেলছি। বিশ্বকাপের আলোকেই দল ঘোষণা করেছি। অনেক চিন্তাভাবনা করেই দল দিয়েছি। ফর্মে সবাই নেই এটা দুঃখজনক।
‘কাঙ্ক্ষিত ফলাফলও করতে পারছি না। হতাশাজনকই বলবো, দুটি ম্যাচেই জেতার মতো অবস্থায় ছিলাম। প্রথম ম্যাচে বোলিংয়ের কারণে পিছিয়ে গেছি। শেষদিকে ওভার প্রতি ১৫ রান করে লাগত। অন্যতম সেরা বোলাররা ছিল। টি-টোয়েন্টির নাটকীয়তায় আমরা পারিনি। দ্বিতীয় ম্যাচেও ২ উইকেট হারিয়ে এমন অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিলাম। শান্ত ও হৃদয় ব্যাট করছিল, জয়টা মনে হচ্ছিলো সময়ের ব্যাপার। ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণে ৩ বল বাকি থাকতেই পরাজয়। নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তার কারণ, হতাশার কারণ।
কোনও কারণ ছাড়াই ২৫ মে পর্যন্ত বিশ্বকাপ দল পরিবর্তন করা যাবে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ক্রিকেটারদের বাজে পারফরম্যান্সের পর দলে পরিবর্তন আসবে কিনা এমন প্রশ্ন ছুটে যায় প্রধান নির্বাচকের কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, এটা একটা নিয়ম ছিল। বাড়তি সুবিধা নেওয়ার জন্য প্রত্যেক দলকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সে আলোকে ২৪ তারিখ দুবাই সময় রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত সুযোগ ছিল। প্রটোকল অনুযায়ী ক্যাপ্টেন, কোচ এবং আমরা নির্বাচকরা বসে কিছুক্ষণ আলাপ করেছিলাম।
‘এ মুহূর্তে যে দল আছে, সে দলটাই রেখেছি। বিশ্বকাপে যাতে ভালো করতে পারি সেই আশা করছি। যে দল নির্বাচন করেছিলাম সেই দলের ওপরই আস্থা রাখছি।’
দ্বিতীয়য় ম্যাচে হারের পর সাকিব আল হাসান জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমান পর্যাপ্ত অনুশীলনের পাননি ক্রিকেটাররা। এবার সাকিবের সুরে সুর মেলালেন নির্বাচক লিপুও।
তিনি বলেন, অনুশীলন তো আমরা করতে পারিনি। আপনি জানেন ওখানে একটা টর্নেডো হয়েছিল। মাঠ প্রস্তুত ছিল না, যে কয়টা দিন হাতে সময় ছিল সে জায়গায় ঘাটতি হয়েছে। এর বেশি কিছু না। উইকেট দুই দলের জন্যই সমান, মানিয়ে নেওয়াই মুখ্য। পিচটা মন্থর, সবাই দেখছি। তবে এই উইকেটেই দুই দল ব্যাটিং-বোলিং করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ হারের পরও টাইগাররা বিশ্বকাপে ভালো করবে বলে বিশ্বাস প্রধান নির্বাচকের। লিপু বলেন, আমরা কেউ আশা করিনি দলটাকে এমন পরিস্থিতি দিয়ে সফর শুরু করতে হবে। তবে এটাই বাস্তবতা, এই সিরিজ শেষেও ১২ দিনের মতো সময় থাকবে। দ্রুত এই ফলাফল থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তারা জানে, বিশ্বকাপে দল ভালো করলে এই সিরিজ হার অতীত স্মৃতি হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমার বিশ্বাস, যে কয়দিন ট্রেনিংয়ের সুযোগ পাবো, সঙ্গে দুটি ওয়ার্ম আপ ম্যাচ, সেখানে স্পোর্টিং উইকেটে খেলার সুযোগ পাবো। আমার বিশ্বাস তারা (ক্রিকেটাররা) আস্থার জায়গা ফিরে পাবে। যদিও প্রতিপক্ষ ভারত, অনেক শক্তিশালী দল। তারপরও যে দুই ভেন্যুতে বিশ্বকাপ ম্যাচ আছে, সেখানেই প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ ইতিবাচক ব্যাপার হবে।