ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে তিন ইউরোপীয় দেশ- স্পেন, নরওয়ে এবং আয়ারল্যান্ড। দেশগুলোর এই কূটনৈতিক পদক্ষেপের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দখলদার ইসরায়েল।
প্রায় এক মাস ধরেই ইউরোপের এই তিন দেশ যৌথভাবে ফিলিস্তিনকে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র স্বীকৃতি’র বিষয়ে আলোচনা করছিল। তারা পারস্পরিক আলোচনার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দিতে একসঙ্গে কাজ করছে।
প্রায় এক মাস ধরেই ইউরোপের এই তিন দেশ যৌথভাবে ফিলিস্তিনকে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র স্বীকৃতি’র বিষয়ে আলোচনা করছিল। তারা পারস্পরিক আলোচনার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দিতে একসঙ্গে কাজ করছে।
এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার স্পেনের মন্ত্রিসভা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র অনুমোদন করেছে। পৃথক ঘোষণায় নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড সরকারও নিজ নিজ দেশের মন্ত্রিসভায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির অনুমোদনের কথা ঘোষণা করে।
এদিকে এই ইউরোপীয় দেশগুলোর ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতির অনুমোদনের পরপরই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।
সামাজিক প্লাটফর্ম এক্স-এ স্পেনের সমালোচনা করে কাটজ বলেন, ‘সানচেজের সরকার ইহুদিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধে উসকানিতে জড়িত। কারণ খামেনি, সিনওয়ারের মতো স্প্যানিস উপ-প্রধানমন্ত্রী ইয়োলান্ডা দিয়াজও ইসরায়েলকে নির্মূল করার এবং একটি ইসলামিক ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।’
দিয়াজ গত সপ্তাহে ‘নদী থেকে সমুদ্র পর্যন্ত ফিলিস্তিন মুক্ত হবে’ স্লোগান দিয়ে একটি বক্তৃতা শেষ করেছেন উল্লেখ করে কাটজ আরও বলেন, ‘সানচেজ, আপনি যদি আপনার ডেপুটিকে বরখাস্ত না করেন এবং একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ঘোষণা করেন তাহলে আপনি ইহুদিদের গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য উসকানির অংশীদার।’
এরআগে স্পেনের সরকারি মুখপাত্র পিলার আলেগ্রিয়া জানান, ১৯৬৭ সালের আন্তর্জাতিক সীমানা অনুযায়ী ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিয়েছে স্পেন। আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত সীমানা অনুযায়ী উল্লিখিত ভূমিকে ফিলিস্তিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে স্পেন।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, ‘স্পেন আনুষ্ঠানিকভাবে ‘‘ন্যায়বিচারের দিকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ এবং শান্তি অর্জনের একমাত্র পথ’’ হিসেবে ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।’
এদিকে, নরওয়ের সরকারও আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ ইদে বলেন, ‘নরওয়ে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সবচেয়ে সাহসী রক্ষকদের মধ্যে একটি।’
এছাড়াও এদিন আয়ারল্যান্ডও আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। মঙ্গলবার ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে দেশটির সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরকার এই স্বীকৃতির অনুমোদন দিয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার ফিলিস্তিনকে একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ডাবলিন ও রামাল্লার মধ্যে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হয়েছে।
রামাল্লায় আয়ারল্যান্ডের একটি পূর্ণ দূতাবাস এবং ফিলিস্তিনে আয়ারল্যান্ডের একজন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করা হবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার নরওয়ে, স্পেন ও আয়ারল্যান্ডের শীর্ষনেতারা পৃথকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানান। ২৮ মে থেকে স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার কথা বলা ইউরোপের এই তিনদেশের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি তারা আরও দেশকে এ ঘোষণায় যুক্ত হতে আহ্বান জানায়।
এর আগে প্রায় ১৩৯টি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে ইউরোপেরও কিছু দেশ। ১৯৮৮ সালে হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া, সাইপ্রাস, মাল্টা ও সুইজারল্যান্ড ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।