ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বুধবার ঘোষণা করেছে যে তারা গাজা-মিসর সীমান্তের তথাকথিত ফিলাডেলফি রুটের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। তারা সেখানে রকেট লঞ্চার এবং অন্তত ২০টি সুড়ঙ্গ পাওয়ার দাবি করেছে। তবে মিসরীয় সূত্র বলেছে, এসব দাবি নির্জলা মিথ্যা।
বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনৈ ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডএফ) মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, নতুন যে এলাকা ইসরাইল দখল করেছে, তা ১৪ কিলোমিটার (৮.৭ মাইল)। এটি গাজা-মিসর সীমান্তে অবস্থিত। এটি ‘হামাসের অস্ত্র চোরাচালানের অক্সিজেন পাইপলাইন’ হিসেবে কাজ করে।
ইসরাইলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা হামাসের রকেট লঞ্চারও দখল করেছ।
তবে মিসরের রাষ্ট্রীয় সহায়তাপুষ্ট আল-কাহেরা নিউজ টিভি ‘উচ্চ পর্যায়ের’ সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, মিসর ও গাজার মধ্যে সুড়ঙ্গ থাকার যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তাতে কোনো ‘সত্যতা’ নেই। চ্যানেলটি আরো জানায়, এটি হলো দক্ষিণ গাজার রাফায় ইসরাইলি বাহিনীর বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে মিথ্যার বেসাতি করার চেষ্টা।
রাফায় ইসরাইলি হামলা বন্ধে জাতিসঙ্ঘ প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছে আলজেরিয়া
আলজেরিয়া জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের কাছে রাফাহতে ইসরাইলি হামলার সমাপ্তি এবং একটি ‘তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির’ আহবান জানিয়ে খসড়া প্রস্তাব পেশ করেছে। এএফপি খসড়া প্রস্তাবটি দেখেছে উল্লেখ করে এ কথা জানায়।
আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশের চাপ উপেক্ষা করে ইসরাইল রাফা শহরে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে। গাজা যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা রাফায় আশ্রয় নিয়েছে। এতে রাফা জনাকীর্ণ শহরে পরিণত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আদালত গত সপ্তাহে ‘দখলদার শক্তি ইসরায়েলকে অবিলম্বে রাফাহতে যুদ্ধ বন্ধ এবং অন্য যেকোনো পদক্ষেপ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।’ এই রায়ের প্রেক্ষিতে খসড়া প্রস্তাবটি তৈরি করা হয়েছে।
এই খসড়া প্রস্তাবে ‘সকল পক্ষের অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো হয়েছে এবং এছাড়াও সকল পণবন্দীদের অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করা হয়েছে।’
রাফায় বাস্তুচ্যুত মানুষের একটি তাঁবুতে রোববার ইসরাইলি হামলায় ৪৫ জন নিহত হয়েছে। এই হামলায় ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দার তোপের মুখে পড়ে ইসরাইল। এই ঘটনার পর আলজেরিয়া মঙ্গলবার জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকেছে।
গাজার এক বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, মঙ্গলবার রাফা শহরের পশ্চিমে বাস্তুচ্যুতদের শিবিরে ইসরাইলের আরেকটি হামলায় আরো ২১ জন নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত অমর বেন্দজামা কবে নাগাদ প্রস্তাবটি ভোটের জন্য উপস্থাপন করা হবে তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি।
চলতি সপ্তাহে এটি ভোটের জন্য উপস্থাপনের আশা প্রকাশ করে চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেছেন, ‘আমরা আশা করি এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করা যেতে পারে। কারণ, এর সঙ্গে জীবন রক্ষার বিষয়টি জড়িত।’
জাতিসঙ্ঘে ফরাসি রাষ্ট্রদূত নিকোলাস ডি রিভেরা পরিষদের বৈঠকের আগে বলেছেন, ‘কাউন্সিলের জন্য এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার এটি চূড়ান্ত সময়। এটি জীবন মৃত্যুর জন্য জরুরি বিষয়।’
৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উপর হামাসের হামলার জবাবে ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক নৃশংস অভিযান শুরুর পর থেকে নিরাপত্তা পরিষদের এটি একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান।
মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে কেন্দ্র করে দু’টি প্রস্তাব পাস করার পর মার্চ মাসে কাউন্সিল অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাসের আহ্বান জানালে ইসরাইলের প্রধান মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাধার কারণে তা অবরুদ্ধ হয়।
সূত্র : টাইমস অব ইসরাইল ও এএফপি