• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন

নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় বিএনপি

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৭

নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার আবর্তে পড়েছে বিএনপি। ‘তত্ত্বাবধায়ক’ না ’সহায়ক সরকার’ চায়-তা চূড়ান্ত করতে পারছেন না তারা। সহায়ক সরকারের দাবি তুলে গত এক বছর ধরে সোচ্চার দলের নেতারা। তবে সহায়ক সরকারের রূপরেখা-পরিকাঠামো কী ধরনের হবে তা নিয়ে একাধিক খসড়া হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি দলটি। এই খসড়া এখন আবার নতুন করে পরিমার্জন হচ্ছে। সেখানে ‘সহায়ক সরকার’ বলা হলেও কার্যত তা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলেই। বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক ও সহায়ক সরকারের দাবির মধ্যে কার্যত আর কোনো পার্থক্য থাকছে না বলে জানা গেছে।

এদিকে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা শিগগিরই ঘোষণার সম্ভাবনা ক্ষীণ। দলের হাইকমান্ডকে পরিস্থিতি বুঝে এই ঘোষণা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা। তারা বলেছেন, রূপরেখা দেওয়ার পর সরকার যদি না মানে তাহলে কী করার আছে? দাবি মানতে আবার রাজপথে যেতে হবে। রাজপথে নামার উপযুক্ত সময় এখনো আসেনি। রাজপথে নামলে আখেরে কি হবে তা আগেভাগে বিশ্লেষণ করে নিতে হবে।

জানা গেছে, লন্ডন থেকে দেশে ফিরে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ফেরার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, পুনরায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে মাঠে থাকতে চায় বিএনপি। বিএনপির নেতাদের যুক্তি হলো-সুপ্রিম কোর্টের সংক্ষিপ্ত রায়ে দুইবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সর্বশেষ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণেও সে কথা উল্লেখ করেছেন। সংবিধানের এই ষোড়শ পর্যবেক্ষণে যেসব বক্তব্য এসেছে তাতে আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তোলার যৌক্তিকতা এসেছে। সুতরাং তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে আন্দোলন করলে সরকারের সঙ্গে দর কষাকষিতে অগ্রগামী থাকা যাবে। এদিকে দলের একটি অংশ সংবিধানের আলোকেই সহায়ক সরকার নিয়ে আন্দোলন চায়। তাদের যুক্তি হলো- এতে করে সংবিধানের সংশোধনীর প্রয়োজন পড়বে না। সরকার এমনিতেই ছাড় দিবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সহায়ক সরকার নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় বিএনপি। কারণ সহায়ক সরকার প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি থাকলে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে না। সহায়ক সরকার থাকলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ হবে। এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। শুধু তাই নয়, ইসির মাঠ পর্যায়ে লোক নেই। তাদের কাজে লাগবে প্রশাসন। আর প্রশাসন মানেই প্রধানমন্ত্রীর আওতা। এমন হলে সুষ্ঠু ভোট কোনোভাবেই সম্ভব না। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থেই তত্ত্বাবধায়ক প্রয়োজন। এখন থেকে আমরা ২০১৪ সালে যে দাবিতে নির্বাচন বর্জন করেছিলাম, সেই তত্ত্বাবধায়কের দাবিতেই ফিরে যাবো। ভোটের ৯০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সেনাবাহিনী নামবে এবং তাদের পূর্ণ ক্ষমতা দিতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, আমরা এমন একটি সরকার চাই, যা হবে সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ। অবশ্যই তা হতে হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাইরে রেখে। এটাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা অন্য নামেও ডাকা যেতে পারে। চলমান সংসদ না ভেঙে দিলে দেশে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। জাতি কখনো এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেটা বিশ্বাস করে না।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী হোক না কেন, দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকলে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়। যখনই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, তখন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। তার প্রমাণ ১৯৭৩ ও ২০১৪ সালের নির্বাচন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ষোড়শ সংশোধনীর পূর্ণাঙ্গ রায়ে কিন্তু দুই টার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে বলে উল্লেখ আছে। সুতরাং এই পর্যবেক্ষণ কার্যকর করার পথ কিন্তু খোলা আছে। তাই সেটা নিয়েই আমাদের কথা বলা উচিত। সহায়ক সরকারের কথা কার মাথা থেকে কখন এসেছে বলা মুশকিল। তবে রাজনীতিতে নানা সময় নানা বিষয় আসবে যাবে এটা কোনো ম্যাটার না। একটা মানুষকে অনেকে অনেক নামে ডাকতে পারে। যেকোনো নামেই ডাকা হোক আমরা নির্বাচন চাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।

বিএনপি ঘরানার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, সহায়ক সরকার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যে মূল সাংবিধানিক তফাত্ একটি। সেটা হলো- একটির কাঠামো আছে, আরেকটির নেই। যে কোনো নতুন নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন করে সেটা স্থায়ীভাবে কার্যকর করতে অবশ্যই জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্যতা পেতে হবে। এর মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপির উচিত হবে তাদের রূপরেখা অতি দ্রুত তুলে ধরা।

এদিকে জানা গেছে, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) বাতিলের রায় নিয়ে রিভিউ করা যায় কি না, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ১৫৪ সংসদ সদস্যের বৈধতা নিয়ে রিট বা আদালতে যাওয়া যায় কি না সেসব বিষয় নিয়ে বিএনপিতে আলোচনা চলছে। বেগম জিয়ার সঙ্গে এনিয়ে আইনজীবী নেতারা একাধিকবার বৈঠক করেছেন। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদের প্রথম মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক দাবি নিয়েই রাজপথে নামে দশম জাতীয় সংসদ বর্জন করা দল বিএনপি। গত বছর ১৮ নভেম্বর ‘নির্বাচন কমিশন গঠন এবং শক্তিশালীকরণ’ নিয়ে বিএনপির প্রস্তাবনায় বেগম খালেদা জিয়া ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের’ বিষয়টি তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘যথাসময়ে সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দেওয়া হবে।’ গত ১৫ জুলাই লন্ডন যাওয়ার আগে এই রূপরেখা ঘোষণার কথা বলা হয়েছিল। তবে ভিশন ২০৩০ দেওয়ার কারণে তা পিছিয়ে যায়। এরপর থেকে বিএনপি নেতারা সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে বলে দাবি জানিয়ে আসছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ