সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেহেতু, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্বনাম জামায়াত-ই- ইসলামী/জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) এবং তার অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির (পূর্বনাম ইসলামী ছাত্রসংঘ)-কে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসেবে গণ্য করা হইয়াছে; এবং যেহেতু, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রিট পিটিশন নং-৬৩০/২০০৯-এ ১ আগস্ট ২০১৩ তারিখের প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এর রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত/প্রাপ্ত নিবন্ধন বাতিল করিয়া দিয়াছে এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগের ওই রায়কে বহাল রাখিয়াছে; এবং যেহেতু, সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রহিয়াছে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং তার অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল।
এতে আরও বলা হয়েছে, যেহেতু সরকার বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সব অঙ্গ সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সহিত জড়িত রহিয়াছে সেহেতু, সরকার, সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ তার সব অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিল এবং উক্ত আইনের তফসিল-২ এ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ তার সব অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসেবে তালিকাভুক্ত করিল। ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
এর আগে, মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বুধবারের মধ্যেই জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হচ্ছে। কোন আইনি প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ হবে তা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসব।
আনিসুল হক আরও বলেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকারের বক্তব্য শুনেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন আগামীকালের মধ্যে একটা ব্যবস্থা নেওয়ার। আমি কিছুক্ষণ পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে বসব এবং সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। কোন আইনি প্রক্রিয়ায় বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে সেটা যখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব তখন হবে।
আনিসুল হক বলেন, কোনো দলকে যখন নিষিদ্ধ করা হয় তখন সেটা নির্বাহী আদেশেই হয়। সেটা কোনো বিচার বিভাগীয় আদেশে হয় না। যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করা এক কথা এবং জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা আরেক কথা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (২৯ জুলাই) রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের বৈঠকের পর জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
এদিকে রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রক্রিয়ার কথা জেনে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, একটি রাজনৈতিক দল বা জোট অন্য একটি রাজনৈতিক দলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বাংলাদেশের আইন ও সংবিধান কাউকে এ এখতিয়ার দেয়নি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে দাবি করে জামায়াতের আমির বলেন, নিজেদের অপকর্মের দায় এড়াতে সরকার শুরু থেকেই মিথ্যাচার করছে। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জামায়াত ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর দোষারোপ করে বক্তব্য দিচ্ছে সরকার।