• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪২ অপরাহ্ন

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, হাসিনার পতনে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে ভারত

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০২৪

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাতে বাস্তবিকই কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে ভারত। বাংলাদেশ ছেড়ে শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। তিনি এরপর কোথায় যাবেন, তৃতীয় কোনও দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেবেন কি না সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। ভারতও তাকে তার বিপদের দিনে একেবারে অগ্রাহ্য করতে পারছে না। যদিও নয়াদিল্লি হাসিনার পক্ষেই রয়েছে এমন কোনও দাবি কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের বিবৃতিতে পাওয়া যায়নি। তবে নিতান্ত মানবিকতার খাতিরে এবং দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের কারণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার তাকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির অভিঘাত সামলে উঠে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরির জন্য সময় দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে।

 

যেহেতু ব্রিটেন এবং আমেরিকা হাসিনাকে ভিসা দিতে অস্বীকার করেছে তাই দীর্ঘদিনের ভারতবন্ধুকে একা ছেড়ে দিতে নারাজ নয়াদিল্লি। যদিও ভারতের কাছে এখন সবথেকে মাথাব্যথার বিষয় শুধুমাত্র শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ নয়। বরং হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা, সেদেশে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা এবং সেদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের জীবন-সম্পত্তির নিশ্চিত করতে করতে ঢাকার ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করাটাই নয়াদিল্লির প্রধানতম কর্তব্য। মোদি সরকার জানে, হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তার অনিবার্য প্রকোপ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পড়বে। পাশাপাশি বাংলাদেশের ঘটনাগুলিকে কেন্দ্র করে ভারতে বিশেষ করে সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালয়ের মতো রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে সেদিকেও সতর্ক নজর রাখছে নয়াদিল্লি।

 

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ইস্যুতে বিরোধীরা ইতিমধ্যে কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও শাসক-বিরোধী শিবিরের এই ব্যাপারে একই পঙক্তিতে থাকা বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশে যে নাটকীয়ভাবে পটপরিবর্তন ঘটল, সেক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন যুক্তিসংগতভাবেই উঠছে। ভারতের গোয়েন্দারা কি এই ধরনের আশঙ্কার কথা একেবারেই জানতেন না। হাসিনাকে সরানোর নেপথ্যে বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সর্বদলীয় বৈঠকে জানিয়েছেন জয়শংকর। পাকিস্তানের পাশাপাশি চীনের গতিবিধি নিয়েও নানাবিধ কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত বাদে প্রায় সবদেশই চীনের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। বাংলাদেশে যদি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে চীনা সক্রিয়তা বাড়ে তাহলে বিপদ বাড়বে নয়াদিল্লিরই। চারদিক দিয়ে চীন যেভাবে ভারতকে ঘিরছে সেটা দেশের সুরক্ষা তো বটেই, ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। সংসদের উভয়কক্ষে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে নয়াদিল্লির অবস্থান অনেকটাই স্পষ্ট। মোদি সরকার যে বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে চাইছে না সেটাও ইতিমধ্যে বোঝা যাচ্ছে।

 

তবে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ক্রমশ নির্বান্ধব অবস্থায় পৌঁছে যাওয়ার নেপথ্যে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক দূরদৃষ্টির অভাবই দায়ী। চীনকে খোলা মাঠে ছেড়ে দেয়া আর খাল কেটে কুমির ডেকে আনা দুটো একই ব্যাপার। বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন দাঁড়াবে তা নিয়ে আপাতত জল মাপছে কেন্দ্র। হাসিনার আমলে ঢাকা-নয়াদিল্লি সুসম্পর্কের কারণে বাংলাদেশের জনমানসের একটা বড় অংশের মধ্যে ভারতবিদ্বেষ ক্রমশ বেড়েছে। সেই বিদ্বেষ রাতারাতি গায়েব হয়ে যাবে না। বরং চীন-পাকিস্তান বরাবরের মতোই চেষ্টা করবে সেই আগুনে লাগাতার ঘৃতাহুতি দিতে। নয়াদিল্লিকে তাই সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্বগুরু বলে প্রচারের ঢাক বাজালেই সত্যিই বিশ্বগুরু হওয়া যায় না। তার জন্য কিছু কাজ করাও প্রয়োজন।

 

বাংলাদেশে যা ঘটছে তা নিঃসন্দেহে সেদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। একটি সার্বভৌম দেশের অন্দরের পরিস্থিতিতে নাক গলানো ভারতের ইতিহাসে অন্তত নেই। কিন্তু প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার আগুনে যদি ভারতের জনজীবনে সামান্যতমও আঁচ লাগে তাহলে নয়াদিল্লির হাত গুটিয়ে বসে থাকার কোনও কারণ নেই। বাংলাদেশের ঘটনার দিকে তাই কেন্দ্রীয় সরকারের চোখ-কান খুলে রেখে সতর্ক দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা দরকার। সূত্র: ভারতীয় মিডিয়া।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ