আওয়ামী লীগের সাধারণ সমপাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি স্বার্থান্বেষি মহল চট্টগ্রামের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও রংপুরের ঠাকুবাড়িতে পাশবিক ও বর্বোরচিত হামলা চালিয়েছে। রংপুরে যেদিন হামলা হয়েছে ওইদিন থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্তের পাশে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি নির্মাণের পাশাপাশি খাট-বিছানা, হাড়ি-পাতিলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই আমরা যার যার দায়িত্ব পালন করছি।
তিনি আরো বলেন, যারা এই পাশবিক হামলা করে সনাতন ধর্মালম্বীদের ঘর-বাড়ি পুড়ে দিয়েছে, মন্দিরে আগুন দিয়েছে তারা যারাই হোক তাদেরকে এবং ঘটনা নেপথ্যে যারা আছে তারা যত শক্তিশালী হোক না কেন সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঘটনার নেতৃত্বদানকারী জেলা পরিষদের উপসকারী প্রকৌশলী ফজলার রহমানকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ রবিবার রংপুর ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, ভাঙচুর ও বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী জড়িত এবং সরকারের মদদ ছাড়া এ ঘটনা ঘটতে পারে না বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি মিথ্যাচার করে। তারা মিথ্যাচারের ভাঙ্গা রেকর্ড বার বার বাজায়। তিনি মির্জা ফকরুলের মিথ্যাচারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, গতকাল শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির’ মহাসচিব মির্জা ফকরুল বলেন, স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত, ব্যাংক-বিমা থেকে জোর করে বাধ্য করে সমাবেশে লোক আনা হয়েছিলো। অথচ আমাদের সমাবেশ হয়েছে সরকারি ছুটির শনিবার।
পরে তিনি ব্রাহ্মণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক সম্প্রতি সমাবেশে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সমপাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা সনাতন ধর্মালম্বীদের উপর হামলা করে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আমাদের বিরাজমান দুসম্পর্ক বিনষ্টের অপচেষ্টা করেছে। তাদের চেষ্টা সফল হবে না। এখানকার ক্ষতিগ্রস্থ সনাতন ধর্মালম্বীরা আতংকিত, উদ্নিগ্ন এবং উত্কণ্ঠিত। তাদেরকে প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও মানবিক সহযোগিতা দিতে এসেছি। ভাষণ দিতে আসিনি, ফুলে নিতে আসিনি।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে শুধুমাত্র মুসলমানরাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তাদের রক্ত ঝড়েছে। সংখ্যায় কম হওয়ায় সনাতম ধর্মালম্বীদের উপর রাজনৈতিক স্বার্থবাজ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আক্রমণ করেছে। এ ঘটনা বার বার হচ্ছে। আগামী সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ঘটনার চক্রান্ত ক্রিয়াশীল থাকবে। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা বিশ্বাস করে তাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। একটি মহল সাম্প্রদায়িকতার বিষ-বাষ্প, কালো থাবা বিস্তার যারা করছে। এটা শুধু আওয়ামী লীগ একাই মোকাবেলা করবে না। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। হিন্দু পাড়ার ঘটনা যারা ঘটিয়েছে সত্যের বন্যা প্রতিরোধ করে তা ঠেকানো যাবে না। সবার মুখোশ উন্মোচন করা হবে। কেউ রেহাই পাবে না। ঘটনার ৯ দিন অতিবাহিত হলেও মঞ্চ ও নেপথ্যের সব অপরাধী ধরা পড়েনি। আর অপেক্ষা নয়, দ্রুত সম্ভব যারা অপরাধ করেছে তাদেরকে গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে। যাতে এ ঘটনার পূণরাবৃত্তি না ঘটে।
তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এখানকার সনাতন ধর্মালম্বীরা যেন আর ভীত না থাকে, থর থর করে না কাঁপে, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আমি আর তাদের কান্না শুনতে চাই না। হিন্দুদের ভোট নিবেন কিন্তু তাদের নিরাপত্তা দেবেন না তা হবে না। যারা হামলা চালিয়েছে সেই কুচক্রী মহল শুধু হিন্দু না মুসলমানদেরও শত্রু। এক শ্রেণীর রাজনৈতিক মতলবাজরা এ কাজ করেছে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ছে। অপরদিকে অসাম্প্রদায়িক একটি গোষ্ঠী ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, রংপুর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর জেলা। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার, বিশিষ্ট কম্পিউটর বিজ্ঞানী সজিব ওয়াজেদ জয় রংপুরের রাজনীতিতে আসছে। তাকে যারা ভয় পায় তারা এই অপকর্ম চালাচ্ছে। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, নিজেরা শান্তিতে থাকতে চাইলে জনগণকে খুশি রাখবেন। দল ভারী করার জন্য খারাপ লোককে দলে আনবেন না। যখন ক্ষমতায় থাকবেন না তখন ৫ হাজার পাওয়ার বাতি দিয়েও খারাপ লোকদের খুজে পাবেন এবং আপনারাও পালানোর রাস্তা খুজে পাবেন না। তিনি বলেন, বিএনপি কোন মুখে ভোট চায়? তারাতো কোন কাজ করেনি। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি যে বিমানে রংপুর এসেছি। শুনেছিলাম ওই বিমানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর আসবেন। কিন্তু তিনি এলেন না। তিনি এলে দেখা-দেখি হতো, মুখো-মুখি হতো, কুশল বিনিময় হতো। সৌজন্য দেখাতাম। আমার আসনের পাশে বসাতাম। কিন্তু তিনি নিরাপত্তার অযুহাত দেখিয়ে এলেন না। এটা চরম সৌজন্যতার অভাব। নেতিবাচক রাজনীতি তারা করেন। তিনি লোক দেখানোর জন্য আসবেন। ফটো সেশন করবেন এবং চলে যাবেন। এর আগে বন্যায় তারা কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরে এলেন দেখলেন, চলে গেলেন, জয় করলেন না।