• বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৫ অপরাহ্ন

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পান্না ভারতে পালাতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে নিহত

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৪

ভারতে পালাতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইসহাক আলী খান পান্না নিহত হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।

ভারতে প্রবেশের পর শুক্রবার মধ্যরাতে মেঘালয়ের শিলং পাহাড়ে ওঠার সময় তার মৃত্যু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে তার লাশের এক পাশে রক্তের স্তুপ দেখা যায়। এছাড়া তার পায়ে রক্তের দাগ দেখা গেছে। তবে শরীরের দৃশমান অংশে (বুক, মুখ ও হাত-পায়ে) গুলি বা আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য মতে, ইসহাক আলী খান পান্না বিএসএফ-এর গুলিতে মারা গেছেন।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, পালিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় তার মৃত্যু হয়েছে নাকি অন্য কোনোভাবে তিনি মারা গেছেন সে বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

পান্নার মৃত্যুর খবর জানিয়ে শনিবার বিকেল থেকেই ফেসবুকে শোক জানিয়ে তার বন্ধু-বান্ধব, রাজনৈতিক কর্মীরা পোস্ট করছেন।

পান্নার বড় ভাইয়ের শ্যালক জসিম উদ্দিন খানের সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল তার। জসিম জানিয়েছেন, তিনদিন আগে পান্নার সাথে তার ফোনে কথা হয়েছে। ২৫ জুলাই তিনি পিরোজপুর শহরের বাড়িতে এসে দু’দিন পর ফিরে যান।

জসিমের দেয়া তথ্যমতে, বিভিন্ন মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন, সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন পান্না। ওপারেই তার মৃত্যু হয়। সেটা গুলিতে নাকি স্ট্রোকজনিত কারণে তা নিশ্চিত হতে পারেননি তারা। সীমান্তের ভারত প্রান্তের একটি থানায় তার লাশ রয়েছে বলে জেনেছেন। একই তথ্য জানান, পান্নার ভাগনে ও কাউখালীর চিড়াপাড় সাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েকুজ্জমান মিন্টু।

ভিন্ন একটি সূত্র বলছে, ভারতে পালানোর সময় পান্নার সাথে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনও ছিলেন। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে আমিনের মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল দিয়েও বন্ধ পাওয়া গেছে। আরেকটি সূত্র বলছে, পান্নার সাথে ঝালকাঠি ছাত্রলীগের একজন নেতা ছিলেন।

এদিকে, পুলিশের তরফে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পান্নার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়েও কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা জানান, কেউ বৈধ বা অবৈধ যেভাবেই ভারতে যাক, লাশ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। শুধু বিষয়টি যেকোনো পক্ষ থেকে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে জানাতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিশ্চিত হবেন, মৃত ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক কি-না। পরে দূতাবাসের তহবিল থেকে বা বা স্বজনের খরচে লাশ পাঠানোর ব্যবস্থা করে দূতাবাস।

গত ৫ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন ইসহাক আলী খান পান্না। ওইদিনই তার পিরোজপুর শহরের পাড়েরহাট সড়কের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পিরোজপুরের পৈত্রিক নিবাসে পৃথক দ্বিতল ভবন করেছিলেন পান্না, সেখানেই ভাঙচুর চলে। তার এক ভাই ওই বাড়িতে থাকলেও সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন। পান্নার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া গ্রামে। তবে গ্রামের বাড়িতে তার যাতায়াত তেমন নেই। পিরোজপুরে গেলে শহরের বাড়িতেই থাকতেন তিনি।

আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের ১৯৯৪ সালের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন পান্না। ওই সম্মেলনে নির্বাচিত সভাপতি একেএম এনামুল হক শামীম পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একাধিকবার এমপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের উপমন্ত্রী হলেও পান্না বরাবরই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বাইরে ছিলেন।

তবে ২০১২ সালের সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক এবং পরে বিভিন্ন উপ-কমিটির সদস্য হয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগপর্যন্ত ছিলেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান পান্না। অবশ্য পরে ১৪ দলীয় জোটগত নির্বাচনের কারণে সরে যেতে হয় তাকে। পেশাগত জীবনে বীমা কোম্পানি ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারমান ছিলেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ