কুমিল্লার বুড়িচংয়ে গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙনের ফলে উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পুরোপুরি তলিয়ে যায়। যার ফলে এসব এলাকার বানভাসি পরিবারগুলোর ঠিকানা হয় উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়ণ কেন্দ্রগুলো।
এসব কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেওয়া অসহায় মানুষের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে কাজ করছেন সরকারি, বেসরকারিসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এগিয়ে এসেছেন এসব বন্যাদুর্গত মানুষের সহায়তায়। তাদেরই একজন বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এ টি এম মিজানুর রহমান।
জানা যায়, তিনি একাই নিজস্ব অর্থায়ন ও জনবল দিয়ে বন্যা কবলিত বুড়িচং উপজেলার ২৭টি আশ্রয়ণ কেন্দ্রের অন্তত ১০ হাজার মানুষকে খাদ্য, চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য তিনি রান্নার কাজে অর্ধশতাধিক বাবুর্চি এবং শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী এসব আশ্রয়ণ কেন্দ্রে রেখেছেন।
এছাড়াও তিনি তার সহোদর ডা. নাজমুল হাসান সাঈদসহ একাধিক চিকিৎসকের সমন্বয়ে কয়েকটি মেডিকেল টিম গঠন করেছেন। এ টিমগুলো প্রতিদিনই দুর্গতদের মাঝে চিকিৎসা সেবা দিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
বন্যার প্রথম দিন শুকনো খাবার বিতরণ করলেও দুর্গত মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে মিজানুর রহমান ২৪ আগস্ট থেকে খাবারের তালিকায় দুপুর ও রাতে খিচুড়িসহ ভারি খাবার সরবরাহ শুরু করেন। এজন্য ২৭টি আশ্রয় কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে পৃথক বাবুর্চি ও সহযোগীসহ খাবার সরবরাহের জন্য অন্তত ২ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছে।
এদিকে নির্ধারিত আশ্রয় কেন্দ্রের বাইরেও তাদের মেডিকেল টিম কাজ করছে বলেও জানান সাবেক এই চেয়ারম্যান।
বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবাই শুকনো চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট দিলেও মিজানুর রহমান আশ্রিতদের জন্য বাবুর্চি এনে রান্না করাচ্ছেন। এতে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বয়স্ক ও শিশুদের অনেক সুবিধা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, আমি এ উপজেলার দুর্গত মানুষের সেবায় কোনো স্বার্থের মোহে কাজ করছি না। আগে করোনাসহ বিভিন্ন সময়ে আমি মানুষের পাশে ছিলাম। এবারও আছি। যতদিন আল্লাহ সামর্থ্য রাখবেন ততদিন অসহায়, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাব।
তিনি আরও বলেন, আমার মেডিকেল টিম ৫-৭ সদস্য বিশিষ্ট। প্রতিটি টিমে আলাদা চিকিৎসক রয়েছেন। যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানেই যাচ্ছে তারা। ঔষধ, স্যালাইনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তারা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বন্যা পরবর্তী দুর্গতদের পুনর্বাসন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রশাসন, এনজিও, রেডক্রিসেন্ট, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীমূলক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, রেমিট্যান্স যোদ্ধাসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। এছাড়া পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসন কাজ এগিয়ে নিতে হবে। তাহলেই মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
তার অর্থায়নে পরিচালিত আশ্রয়ণ কেন্দ্রগুলো হলো- সোনার বাংলা কলেজ, ভরাসার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, মহিষমারা উচ্চ বিদ্যালয়, বুড়িচং আনন্দ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, বুড়িচং কালিনারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়, বুড়িচং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর জগতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জগতপুর মাদ্রাসা, পীরযাত্রাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, পারুয়ারা আব্দুল মতিন খসরু কলেজ, বিজয়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,পুর্নমতী উচ্চ বিদ্যালয়, লরিবাগ উচ্চ বিদ্যালয়, পাঁচোড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতন,শঙ্কুচাইল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, ছয়গ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা, কালিকাপুর আব্দুল মতিন খসরু কলেজ,বাকশীমুল উচ্চ বিদ্যালয়, ফকির বাজার স্কুল এন্ড কলেজ,সাদকপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়,সাদকপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা,সাদকপুর কোরিয়ান স্কুল,পূর্ব সাদকপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা।