• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৫ অপরাহ্ন

পূর্বাচলে হাসিনা-রেহানা পরিবারের নামে বরাদ্দ প্লট বাতিল চেয়ে রিট

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ছেলেমেয়েসহ শেখ হাসিনা ও শেখ রেহিনা - ছবি : সংগৃহীত

শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচলে বরাদ্দকৃত প্লটসহ রাজউকের সকল অবৈধ বরাদ্দ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী এ রিট দায়ের করেন।

রিটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ বাতিলসহ রাজউকের সকল অবৈধ বরাদ্দ বাতিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এসব অবৈধ বরাদ্দের সাথে জড়িত এবং সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রার্থনা করা হয়েছে।

এছাড়া এসব বরাদ্দের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের একজন প্রাক্তন বিচারপতিকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

আবেদনকারীদের পক্ষে রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দীন।

রিট আবেদনকারী আইনজীবীরা হলেন— মো: রেজাউল ইসলাম, আল রেজা মো: আমির, মো: গোলাম কিবরিয়া, মোহাম্মদ হারুন, মো: বেলায়েত হোসেন সোজা, কামরুল ইসলাম রিগান, হাসান মাহমুদ খান, শাহীনুর রহমান শাহীন এবং মো: জিল্লুর রহমান।

আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দীন সাংবাদিকদের জানান, রাজউকের (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) আলোচিত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে স্বয়ং নিজের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন সদ্যসাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্লট নিয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এছাড়া প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তদের তালিকায় আছেন হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার দুই ছেলে-মেয়ে। ২০২২ সালে তারা প্লট বুঝে পান। পরে বিষয়টি রাষ্ট্রীয় অতি গোপনীয় বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া খোদ রাজউকেরই অনেকে এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রত্যেকে সর্বোচ্চ ১০ কাঠা আয়তনের প্লট নিয়েছেন। প্রস্তাবিত কূটনৈতিক জোনে সব প্লট একত্রে সন্নিবেশিত করার সুযোগ দেয় রাজউক।

সম্প্রতি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের রেফারেন্স উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট মিসবাহ জানান, নিজেকে অসহায় এবং নিঃস্ব বলে সভা-সমাবেশে রাজনৈতিক বক্তব্য দিলেও শেখ হাসিনা স্বয়ং নিজের নামে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। পূর্বাচলে প্রস্তাবিত কূটনৈতিক জোন ২৭ নম্বর সেক্টরে ২০৩ নম্বর রোডে তাঁর প্লট নম্বর ৯। ২০২২ সালের ৩ আগস্ট তার নামে বরাদ্দপত্র ইস্যু করে রাজউক।

শেখ হাসিনার বাসভবন ধানমন্ডির ৫৪ সুধা সদনের ঠিকানায় বরাদ্দপত্র পাঠানো হয়। সম্প্রতি রাজউকে গিয়ে দেখা যায়, রেকর্ডরুমে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ফাইলগুলো বিশেষ চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে। হাসিনার প্লট বরাদ্দের ফাইলের ওপর বড় ইংরেজি হরফে লেখা রয়েছে ভি-৩, পাতা ১৪১। ফাইলে শেখ হাসিনার স্বাক্ষরযুক্ত আবেদনপত্রের কপি, বরাদ্দপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ অন্যান্য কাগজপত্র রয়েছে।

রাজউকের উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) নায়েব আলী শরীফ স্বাক্ষরিত চূড়ান্ত বরাদ্দপত্রে লেখা হয় ‘কাঠা প্রতি ৩ লাখ টাকা হিসাবে ১০ কাঠার প্লটের মোট মূল্য ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলো।’

শেখ হাসিনা ছাড়াও ১০ কাঠা করে প্লট নেন তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়) ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল)। তাদের প্লট নম্বর যথাক্রমে ১৫ এবং ১৭।

এর মধ্যে জয়ের নামে প্লটের বরাদ্দপত্র জারি করা হয় ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর। পরে ১০ নভেম্বর প্লটের মালিকানাসংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। এরআগে ২ নভেম্বর পুতুলের নামেও ১০ কাঠা প্লটের বরাদ্দপত্র ইস্যু করা হয়। এতে এস্টেট ও ভূমি-৩ শাখার তৎকালীন উপপরিচালক হাবিবুর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে। তবে, শুধু হাসিনা ও তার ছেলেমেয়ে নন; পূর্বাচল প্লকল্পে ১০ কাঠা করে প্লট নেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার ছেলেমেয়ে। তাদের নামেও যথারীতি প্লট বরাদ্দ করা হয় ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডের একই জায়গায়। সেখানে শেখ রেহানার প্লট নম্বর ১৩, তার ছেলে রাদোয়ান মুজিব সিদ্দিকের প্লট নম্বর ১১ ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের প্লট নম্বর ১৯।

রাজউকের আইন ও বিধি অমান্য করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে শুধু এই ছয়টি প্লট নয় এরকম অন্যান্য প্লটের বরাদ্দ চ্যালেঞ্জ করে এই রিট পিটিশন দায়ের করা হয়।

রিট আবেদনে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজউকের চেয়ারম্যান, পূর্বাচল প্রকল্প পরিচালক, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রেজওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং আজমিনা সিদ্দিক রুপান্তিকে বিবাদি করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ