ফিলিস্তিনিদের বদলে ভারত থেকে কর্মী নিতে চায় ইসরাইল। এজন্য ‘কল্পনাতীত’ পারিশ্রমিক দিতেও রাজি ভারতের ‘বন্ধু দেশ’ ইসরাইল। ইসরাইলের পরিকাঠামো এবং স্বাস্থ্যখাতে উন্নতির প্রয়োজন। তাই বিপুলসংখ্যক অদক্ষ শ্রমিক পাঠানোর আর্জি জানিয়ে ভারতের দ্বারস্থ হয়েছে ইসরাইল। তেমনটাই জানিয়েছে ভারতের ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (এনএসডিসি)’।
এনএসডিসি জানিয়েছে, ভারতের কাছে ১০ হাজার নির্মাণকর্মী, এবং সেবাকর্মী হিসেবে কাজ করবেন, এমন পাঁচ হাজার জনকে চেয়ে পাঠিয়েছে ইসরাইলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার।
এনএসডিসি এ-ও জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরুতেও ভারতের কাছে একই অনুরোধ জানিয়েছিল ইসরাইল। কয়েক মাসের মধ্যে ফের একবার এলো অনুরোধ।
তবে এই বিবৃতিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, এর আগে যে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভারতীয় কর্মীদের ইসরাইলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে কিছু নির্বাচন সঠিক ছিল না।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের আক্রমণের পর ‘হাতে মারার’ পাশাপাশি ফিলিস্তিনি ‘ভাতে মারতে’ সক্রিয় হয়েছিল ইসরাইল।
বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প এবং শিল্পক্ষেত্রে ‘ওয়ার্ক ভিসা’ নিয়ে কাজ করা ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ছাঁটাই করে নেতানিয়াহুর সরকার। আর সেই জায়গায় সুযোগ যায় ভারতীয় শ্রমিকদের কাছে।
ইসরাইলের নির্মাণশিল্পে কর্মরত ৯০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে ছাঁটাই করা হয়। পরিবর্তে ভারত থেকে এক লাখ শ্রমিককে নিয়ে যাওয়া হবে বলে গত বছর জানিয়েছিল সে দেশের সরকার। সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গেছে।
ইসারাইলি দূতাবাসের বিবৃতি উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় পাঁচ হাজার ভারতীয় কর্মীকে দু’টি পৃথক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ করা হয়েছে ইতিমধ্যেই।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে থাকা বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এই নিয়োগ করা হয়েছে। এবার আবার নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
নির্মাণকর্মীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহে। এনএসডিসি জানিয়েছে, নির্মাণকাজে নির্দিষ্ট দক্ষতার ভিত্তিতে কর্মীদের বেছে নেয়া হবে।
ইসরাইলের জনসংখ্যা, অভিবাসন এবং সীমান্ত কর্তৃপক্ষ পিআইবিএ-র একটি দল আগামী সপ্তাহে ভারত সফরে যাচ্ছে। কর্মীদের দক্ষতা পরীক্ষা করবে পিআইবিএ-র ওই দল। সেই পরীক্ষার ভিত্তিতেই নির্মাণকর্মীদের নির্বাচন হবে।
পিআইবিএ-র তরফে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া মহারাষ্ট্রে হবে বলেও জানানো হয়েছে এনএসডিসির তরফে।
পাশাপাশি ইসরাইলের স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা উন্নত করতে ভারতের কাছে পাঁচ হাজার সেবাকর্মীও চেয়ে পাঠানো হয়েছে নেতানিয়াহু সরকারের তরফে।
যে সব চাকরিপ্রার্থীর কাছে স্বীকৃত ভারতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সনদপত্র থাকবে, তারা এই কাজের জন্য আবেদন করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে।
তবে ওই সেবাকর্মীদের অবশ্যই দশম শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করতে হবে এবং কমপক্ষে ৯৯০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ নেয়ার শংসাপত্র থাকতে হবে বলে এনএসডিসি জানিয়েছে।
ইসরাইলের নির্মাণশ্রমিক নিয়োগের প্রথম দফায় মোট ১৬,৮৩২ জন প্রার্থী পরীক্ষা দিতে উপস্থিত হয়েছিলেন। যার মধ্যে ১০,৩৪৯ জনকে বেছে নেয়া হয়েছিল।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যারা আগে নির্বাচিত হয়েছেন বা আগামী দিনে নির্বাচিত হবেন, তাদের চিকিৎসা, বিমা, খাবার এবং বাসস্থানের মাসিক খরচ দেয়া ছাড়াও প্রতি মাসে ১.৯২ লাখ রুপি করে বেতন দেয়া হবে। প্রতি মাসে বোনাস হিসেবে ১৬,৫১৫ রুপিও দেয়া হবে ওই কর্মীদের।
২০২৩ সালের নভেম্বরে অদক্ষ কর্মী জোগানের জন্য ভারতের উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং তেলঙ্গানা রাজ্য সরকারের সাথেও যোগাযোগ করেছিল এনএসডিসি।
উল্লেখ্য, যে কর্মীদের বেছে নেয়া হবে, তাদের আগে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সেই প্রশিক্ষণে ইসরাইলি সংস্কৃতি এবং জীবনধারা সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেয়া হবে কর্মীদের।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা