• বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন

অবসান হলো জোড়া জীবনের, ৩২ মাস পর হাসপাতাল থেকে ফিরেলের বাড়ি

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৪
বাড়ির আঙিনায় চেয়ারে বসা নুহা ও নাবা

ব্যয়বহুল ও জটিল অস্ত্রোপাচারে আলাদা হওয়া দুই বোন নুহা ও নাবা ৩২ মাস পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে ছাড়পত্র পেয়ে গত ২৫ নভেম্বর তারা বাড়ি ফেরে। নুহা ও নাবার চাঞ্চলতায় এখন মুখর হয়ে উঠেছে বাড়ির আঙিনা। তা দেখে আনন্দে আত্মহারা তাদের বাবা আলমগীর হোসেন রানা ও মা নাসরিন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম খামার এলাকার আলমগীর-নাসরিন দম্পতির ঘরে ২০২১ সালের ২২ মার্চে জন্ম হয় জোড়া লাগানো দুই বোন নুহা ও নাবা। কোমর ও মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো শিশু দুটির পায়ুপথ ছিল একটি। ১৪ দিন বয়সে চিকিৎসকদের সহযোগিতায় তাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান বাবা আলমগীর ও মা নাসরিন। গত ১৯ ফেব্রয়ারি সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত অস্ত্রোপচারে তাদের পৃথক করা হয়। অপারেশনে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে ৩৯ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ১০০ জনের মেডিক্যাল টিম অংশ নিয়েছিল।

এছাড়া তাদের শরীরে আরো সাতটি সফল অপারেশন করা হয়। এখন পৃথক জীবন নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে তারা। তাদের চাঞ্চলতায় এখন মুখর পুরো বাড়ি।

সরেজমিনে নুহা-নাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙ্গিনায় খেলা করছে দুই শিশু। কখনো বাবার কোলে আবার কখনো মায়ের সঙ্গে খেলছে তারা। পাশাপাশি দুই মেয়েকে বসিয়ে খাবার খাওয়াতে দেখা যায় মা নাসরিনকে। দেখে বোঝার উপায় নেই যে মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো অবস্থায় তাদের জন্ম হয়েছিল।

এলাকাবাসী জানান, সরকার, ব্যক্তি ও চিকিৎসকদের সহযোগিতায় পরিবহন শ্রমিক আলমগীর হোসেন রানার দুই মেয়ে জোড়া লাগানো থেকে আলাদা হয়েছে। তাদের এখনো চিকিৎসা বাকি। দেশবাসীর কাছে প্রত্যাশা তারা যেন নুহা-নাবার পাশে থাকেন।

স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল বলেন, ‘আলমগীরের শিশু দুটি জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্ম নিয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম, তারা জোড়া লাগানো অবস্থায় পুরো জীবন অতিবাহিত করবে। সৃষ্টিকর্তার রহমতে চিকিৎসকসহ সাধারণ মানুষের সহায়তায় তারা আলাদা জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে। ওদের দেখতে এসেছি। ভালো লাগছে।”

বাবা আলমগীরের কোলে নুহা-নাবা

তিনি আরো বলেন, “শিশু দুটির বাবার কাছ থেকে জানতে পেরেছি তাদের মূত্রনালি এখনো স্থাপন করা হয়নি। আরো একটি অপারেশন হবে। সেজন্য আরো টাকার দরকার। তাদের সর্বশেষ অপারেশনেও চিকিৎসক, সরকারসহ দেশবাসী সহযোগীতা করেন।”

জোড়া থেকে আলাদা হওয়া শিশু নুহা ও নাবার বাবা আলমগীর হোসেন রানা বলেন, “শিশু দুটির চিকিৎসায় খরচ হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। যার বেশির ভাগই ব্যয় করেছে সরকার, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও দানশীল ব্যক্তিরা। দুই সন্তানের চিকিৎসায় পরিবহনের চাকরি হারানোর পাশাপাশি নিজের জমিটুকু বন্ধক রাখতে হয়েছে। সন্তান সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরায় নিউরোসার্জন ডা. মোহাম্মদ হোসেনসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আরো একটি অপারেশন হবে ওদের। দেশবাসীকে পাশে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

তিনি আরো বলেন, “বর্তমানে শিশু দুটির পেছনে প্রতিমাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। পরিবহনের চাকরি না থাকায় হাতে কাজও নেই। নুহা-নাবাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলার জন্য দেশবাসীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ