• শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৫৫ অপরাহ্ন

বেশি বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে যৌনপল্লিতে বিক্রি

উদ্ধার করে তিন কিশোরীকে পরিবারে ফিরিয়ে দিলো পুলিশ

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২৫
প্রতীকি ছবি

কিশোরী ঝর্ণার (ছদ্মনাম) পরিবারে সারাবছর অভাব অনটন লেগেই থাকতো। তাই স্বপ্ন দেখেন নিজে টাকা রোজগারের। দুই বছর আগে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে রংপুর মহানগরীর বাসা থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করতে ঢাকায় যান। সেখানে সাগর নামে এক যুবকের খপ্পরে পড়েন ঝর্ণা। ওই যুবক তাকে বেশি বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে যান। এক পর্যায়ে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত পানি পান করিয়ে অজ্ঞান করে ময়মনসিংহ শহরের গাঙ্গিনারপাড় এলাকার রমেশ চন্দ্র সেন রোডের যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেন।

একই দশা হয় আরও দুই কিশোরীর। এদের মধ্যে একজনের নাম জবা (ছদ্মনাম) ও আরেকজনের নাম তিথি (ছদ্মনাম)। তাদের সুখের সংসার থাকলেও বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার পরই ওই দুই কিশোরী সৎ মায়ের বকাবকি আর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চাকরির পরিকল্পনা করেন।

২০২৩ সালের আগস্টে রংপুরের বাড়ি থেকে ঢাকায় যান জবা। এক ব্যক্তির খপ্পরে পড়েন। বিউটি পার্লারে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে ময়মনসিংহ যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেন।

অপরদিকে তিথি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বরিশালে গ্রামের বাড়ি থেকে চাকরির সন্ধানে ঢাকায় এলে এক ব্যক্তি তাকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কৌশলে নিয়ে যান ময়মনসিংহের যৌনপল্লিতে। সেখানে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। এরপর থেকে ওই তিন কিশোরীর জীবন কাটতে থাকে যৌনপল্লিতে।

অবশেষে ওই তিন কিশোরীরকে উদ্ধার করেছে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাতে তাদেরকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক(ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, যৌনপল্লিতে যারা নিয়ে এসে বিক্রি করেছে তাদের বিরুদ্ধে তিন কিশোরী কোনো অভিযোগ করেননি। তাদেরকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অশ্রুসিক্ত চোখে বাবা-মা তাদের নিয়ে গেছেন। এসময় পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের (কিশোরী) ভালো রাখার আশ্বাস দেয়।

পুলিশ জানায়, কিশোরী ঝর্ণা যৌনপল্লি থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দীর্ঘদিন যাবত চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সুযোগ পাচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সুকৌশলে তার মায়ের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। যৌনপল্লিতে আসার ঘটনাটি মা-বাবাকে খুলে বলে। এমতাবস্থায় তার বাবা-মা মেয়েকে ফেরত নেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ওদিনই গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশ যৌনপল্লিতে গিয়ে ঝর্ণাসহ আরও দুই কিশোরীরকে উদ্ধার করে নিয়ে আনে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, কোনো মেয়ে পরিবারের লোকজন ছাড়া দূরে কোথাও গেলে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তা না হলে, এসব কিশোরীর মতো অন্য যে কারও জীবনে এমন অন্ধকার নেমে আসতে পারে। তবে পুলিশ যেকোনো অপরাধীদের ধরতে তৎপর রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ