বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংকে জমা রাখা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না আমানতকারীরা। ব্যাংকটির শাখাগুলোয় টাকা তুলতে প্রতিদিন ভিড় করছেন গ্রাহকরা। কিন্তু তাদের হতাশ করছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
অনেককে পে-অর্ডার দিয়ে সাময়িক শান্ত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আবার ব্যাংকের হিসাবে টাকা না থাকায় বারবার চেক ডিজঅনার (প্রত্যাখ্যাত) হচ্ছে। যার জমা ৫ কোটি টাকা, তাকে দেয়া হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা।
কাউকে কয়েকদিন পর আসতে বলা হচ্ছে। ব্যাংকটির মতিঝিল, গুলশান ও ধানমণ্ডি শাখায় দুই সপ্তাহ ধরে সরেজমিন পরিদর্শনে এমন চিত্র দেখা গেছে।
চরম অর্থ সংকটে থাকা ব্যাংকটির কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পাওয়ার বিষয়টিও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে চলতি মাসে তারা বেতন না-ও পেতে পারেন। এমন হলে তা হবে ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন ঘটনা।
ফারমার্স ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির (ইসি) নতুন চেয়ারম্যান আজমত রহমান বুধবার যুগান্তরকে বলেন, নগদ টাকার সংকটে আমানতকারীদের টাকা এ মুহূর্তে পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এটি গোপন করার কিছু নেই।
সবাই জানেন। এক্ষেত্রে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে সাময়িক অসুবিধা হতে পারে। এটি স্থায়ী কোনো সমস্যা নয় বলেও তিনি জানান। তবে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্য জানান, চলতি মাসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন ব্যাংকটির জন্য বিশেষ কর্মসূচি বা স্কিমের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকটিকে টিকিয়ে রেখে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধ করতেই মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা করছে। এ কর্মসূচি নেয়া হলে ধাপে ধাপে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারবে ব্যাংকটি।
এজন্য পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। এ নিয়ে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে।
অত্যন্ত গোপনীয়তার কারণে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা জানা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদও শঙ্কিত। কয়েকজন পরিচালককে বুধবার রাতেও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাঙ্গণে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।
ফারমার্স ব্যাংকের উপদেষ্টা প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, ব্যাংকের আমানতের চেয়ে ঋণ প্রদান বেশি হওয়ায় গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়া যাচ্ছে না।
এ ছাড়া দুই মাসে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার আমানত তুলে নিয়েছেন গ্রাহকরা। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বন্ডের অনুমোদনও মিলেছে। ব্যাংকের শেয়ার ছেড়ে মূলধন বাড়ানোরও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
মূলধন সংকট কাটাতে ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমতি পেয়েছে ফারমার্স ব্যাংক। এজন্য ১০ শতাংশ সুদ অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বন্ডটির নাম দেয়া হয়েছে দ্য ফারমার্স ব্যাংক প্রসপারেটি বন্ড-২০১৭। বন্ডটির বিপণনের দায়িত্ব পেয়েছে রেইস পোর্টফোলিও অ্যান্ড ইস্যু ম্যানেজমেন্ট।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, যাত্রা শুরুর মাত্র তিন বছরের মধ্যে দেড় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছে ফারমার্স ব্যাংক। এ জনবলের বেতন বাবদ প্রতি মাসে ব্যাংকটির ব্যয় হয় ৫ কোটি টাকার বেশি।
আর্থিক অনিয়মের পাশাপাশি ফারমার্স ব্যাংকে লোকবল নিয়োগেও নজিরবিহীন দুর্নীতি হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক পরিদর্শনে উঠে এসেছে।
আগ্রাসী মনোভাবের কারণে মাত্র তিন বছরেই ৫৬টি শাখা খুলেছে ব্যাংকটি। আর্থিক লেনদেন, রাজনৈতিক ও আত্মীয় পরিচয়ে ২০১৬ সালের মধ্যে ফরমার্স ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৮৯ জনে। বর্তমানে এ সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে।