আন্দোলন, সংগ্রাম ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আগামী দিনে যে কর্মসূচি আসবে সে কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আন্দোলন ও নির্বাচন, সবকিছুর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আওয়ামী লীগের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে হলে আমাদের আরেকবার জেগে উঠতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা আছে তাদেরও আহ্বান জানাই আসুন, আপনারা আমরা সবাই ঐক্য করি। ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করি। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। বিএনপি নির্বাচনের দল। আমরা নির্বাচন করে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই।
খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সবাই নির্বাচন চায়, সে নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। বিনা ভোটে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। অনির্বাচিত এ পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কিংবা অনির্বাচিত সংসদ বহাল রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেয়া হবে না।
গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ মাঠে গিয়ে ভোট চাচ্ছে আর আমরা ঘরে বসেও সমাবেশ করতে পারব না- এটাতো কখনো হতে পারে না। স্বাধীন দেশ আওয়ামী লীগের জন্য আজকে আমরা পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ। কাজেই আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলমুক্ত হতে হবে। পাকিস্তানি কায়দায় দেশ চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পাকিস্তানিরা যেভাবে আমাদের অধিকার কেড়ে নিয়েছিলো সরকারও এখন পাকিস্তানিদের কায়দায় চলছে। দেশে গণতন্ত্র নেই, নির্বাচন হয় না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জুডিশিয়ারি ক্যু করেছে- এরা অপরাধী, এদের শাস্তি হওয়া উচিত। সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে বলে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, ছুটিতে পাঠিয়েও স্বস্তি পায়নি, তাই দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। পরবর্তীতে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতিকে তার এজলাসে আর বসতে দেয়া হলো না। বাড়িতেও বন্দী করে রাখা হয়েছিল। তার অপরাধ এ সরকারের অপরাধ নিয়ে তিনি সত্য কথা বলেছেন। এ সংসদ অকার্যকর কোনো জবাবদিহিতা নাই বলেছিলেন। তার স্ত্রীকে যেতে দেয়া হলো না। বিদেশেও তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হলো।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সচিবালয়ে রাতের অন্ধকারে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ভালো ভালো অফিসারদের দিনের পর দিন বছরের পর বছর ওএসডি করে রাখা হচ্ছে। এক সময় তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। একই অবস্থা পুলিশেও। ভালো অফিসারদের পদোন্নতি না দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। বেগম জিয়া বলেন, দেশে দুর্ভিক্ষ অবস্থা চলছে। অনাহারে-অর্ধাহারে থাকছে গরিব মানুষ। ৭০ টাকা চালের কেজি। তারা তো ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে বলছিল।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম।
এ ছাড়াও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (বীর প্রতীক) বক্তব্য রাখেন।