বুলগেরিয়ার সর্বত্র নিশ্চিতভাবে যে জিনিসটা পাওয়া যায় সেটি হলো দই দিয়ে প্রস্তুতকৃত বিশেষ ধরনের স্যুপ ‘লসসি’। রাস্তাঘাটে খাবারের দোকানেও মিলবে এই লসসি। পানি, দই, কাঠবাদাম, নানা ধরনের ফল, গুল্মজাতীয় কিছু উপাদান মিলিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ ধরনের স্যুপ লসসি। এই স্যুপ বুলগেরিয়ানদের খুবই প্রিয়। কেউ কেউ সকালে নাস্তায়, বিকালে এমনকি রাতে ঘুমানোর আগেও নাকি এই স্যুপ খেয়ে অভ্যস্ত। দই মধ্যপ্রাচ্য এবং মধ্য এশিয়ায় উত্পত্তি হলেও আলাদা একটা মাত্রা পেয়েছে বুলগেরিয়ানদের কাছে। চার হাজার বছর আগে বুলগেরিয়ানরা ভুল করে আবিষ্কার করে এই দই। দেশটির আদিবাসি নোমাডিক জাতীগোষ্ঠীর মানুষরা পশুর চামড়ার মধ্যে দুধ বহনের সময় এটি জমে থকথকে হয়ে যায়। মূলত পশুর চামড়ায় থাকা বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে দুধের মধ্যে গাঁজন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন সাধিত হয়ে এমনটা হয়েছিল। সেই থেকেই তারা দুধ থেকে দই এবং লসসি তৈরি করে আসছে।
ব্যাকটেরিয়ার কারণে বিশেষ প্রক্রিয়ায় দুধ থেকে দইয়ে পরিণত হয়। এই দই দিয়ে বুলগেরিয়ায় তৈরি হয় হরেক রকমের খাবার। বুলগেরিয়ার বেশিরভাগ খাবারেই দইয়ের ব্যবহার রয়েছে। একারণে সেখানে দইয়ের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হয় দই। সুপারমার্কেটের রেফ্রিজারেটরে খোঁজ করলেই মিলবে দই। অনেকে আবার বাড়িতেও তৈরি করে দই।
ইউনিভার্সিটি অব প্লোভডিভের জাতিতত্ব বিভাগের অধ্যাপক ইলিতসা স্টোইলোভা বলেন, এটা সত্য যে বলকান অঞ্চলের মানুষের নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় দই এবং লসসি থাকে। পৃথিবীর অনেক দেশে দই এবং লসসি তৈরি হলেও বুলগেরিয়ায় একটি নির্দিষ্ট একটি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে এটি করা হয়। নির্দিষ্ট তাপমাত্রা এবং পদ্ধতি অনুসরণ করতে না পারলে এর গুনগত মান অক্ষুণ্ন রাখা সম্ভব না। পশ্চিমাদের কাছে দই এবং লসসি জনপ্রিয় করে তুলতেও অতি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বুলগেরিয়া।
নোমাডিক আদিবাসীদের ভুল থেকে প্রথম দই এবং লসসি তৈরি হলেও এটির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বুলগেরিয়ার বিজ্ঞানী ড. স্টামেন গ্রিগোরভ। দীর্ঘ এক বছরের গবেষণা শেষে ১৯০৫ সালে তিনি দেখাতে সক্ষম হন ঠিক কোন ব্যাকটেরিয়ার কারণে দুধ থেকে গাঁজন প্রক্রিয়ায় দই তৈরি হয়। তার এই আবিষ্কারের প্রতি সম্মান রেখে বিশ্বের একমাত্র দই জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে গ্রিগোরভের গ্রামের বাড়িতে। ব্যাপক চাহিদার জন্য ১৯৫৯ সালে রাষ্ট্রীয়ভাবে ডেইরি ইন্ড্রাস্ট্রিজ তৈরি হয় বুলগেরিয়ায়। দই এবং লসসি হয়ে উঠেছে বুলগেরিয়ানদের জাতীয় প্রতীক।-বিবিসি