২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে বাংলাদেশের বাড়তি প্রয়োজন হবে ৯২ হাজার ৮৪৮ কোটি ডলার বা টাকার অংকে প্রায় ৭৪ লাখ ২৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর ৮৫ দশমিক ১১ ভাগ বা প্রায় ৬৩ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে দেশের অভ্যন্তরীণ উত্স থেকে। অর্থায়নের জন্য সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এজন্য বছরে গড়ে ৬ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বা এফডিআই আসতে হবে বাংলাদেশে যা বর্তমানে আসছে মাত্র গড়ে ২ বিলিয়ন ডলার। এসডিজির অর্থায়ন নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের আজ সমাপনী দিনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সমন্বিত ও সুসংহত অর্থায়ন এবং বিবিধ পক্ষের অংশীদারীত্ব শক্তিশালীকরণ শীর্ষক কর্ম অধিবেশনে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিইডি সদস্য ড. শামসুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে বিভিন্ন খাতে কি পরিমান অর্থ প্রয়োজন হবে প্রতিবেদনে তার একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় যে ব্যয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে সেটি অব্যাহত থাকলেও ৯২৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার বেশি ব্যয় করতে হবে ২০১৭ সাল থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই ১৩ বছরে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট দেশজ উত্পাদন (জিডিপি) যে হারে বাড়ছে সেটি যদি বজায় থাকে সে ক্ষেত্রে এসডিজি অর্জনে জিডিপির প্রায় ১৯ দশমিক ৭৫ ভাগ অর্থ বাড়তি জোগাড় করতে হবে। বর্তমানে আমাদের জিডিপির আকার স্থিরমূল্যে ৯ লাখ ৪৭ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শুরুর দিকে এত বড় ব্যয় করতে হবে না। তবে ক্রমান্বয়ে অর্থব্যয়ের পরিমান বাড়াতে হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসডিজির একটি লক্ষ্য আরেকটি লক্ষ্যের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে অর্থ ব্যয় করলে হবে না, সমন্বিত ভাবে অর্থ ব্যয়ের উদ্যোগ থাকতে হবে। তবে এর সাথে ‘ওভারল্যাপিং’ হওয়ার বিষয়টিও দেখতে হবে। বেশিরভাগ লক্ষ্য অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর সাথে জড়িত। ২০৩০ সালের মধ্যে এই অগ্রগতি অর্জনের জন্য প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশে ধরে রাখতে হবে। যা ২০৩০ সাল নাগাদ ৯ শতাংশের ঘরে উন্নীত করতে হবে।
উল্লেখ্য, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদশে। চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূলসহ স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতে প্রসংশনীয় অর্জন করেছে। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো, স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধিতে প্রতিবেশি দেশগুলো হতেও ভালো অর্জন করেছে। ২০১৫ সালের এমডিজি মেয়াদ শেষ হবার পর শুরু হয়েছে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ বা এসডিজি। এর মূল লক্ষ্য হলো এমডিজির লক্ষ্যগুলোকে টেকসই করা। এমডিজির লক্ষ্যগুলো ছিলো সংখ্যাগত অর্জন। অন্যদিকে এসডিজির লক্ষ্যগুলো হলো এই অর্জনগুলো টেকসই করা। এসডিজির ১৭টি উন্নয়ন অভীষ্টের জন্য ১৬৯টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনে সর্বমোট ২৪১টি নির্দেশক বা ইন্ডিকেটর রয়েছে।
পাঁচটি খাত থেকে এসডিজির এই অর্থ জোগাড় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো সরকারি ও বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি), প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), বৈদেশিক সহায়তা এবং এনজিও খাতের অর্থায়ন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪২.০৯ শতাংশ অর্থায়ন আসতে হবে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ থেকে। এ ছাড়া সরকারি খাত থেকে ৩৫.৫ শতাংশ, পিপিপি থেকে ৫.৫৯ শতাংশ, বৈদেশিক উত্স থেকেক ১৪.৮৯ শতাংশ এবং এনজিও খাত থেকে ৩.৯৩ শতাংশ যোগান দিতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।