• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

আমদানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি ছয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় দ্বিগুণ

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আমদানি ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় এ ঘাটতি তৈরী হয়েছে। চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) প্রথমার্ধে বাণিজ্য ঘাটতি ৯১ শতাংশ বেড়েছে। অপরদিকে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ সময়ে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৪৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
অর্থনীতির গতিধারাতে সাধারণত: আমদানি ব্যয় বাড়লে রপ্তানি আয়ও বাড়ে। কারণ বিদেশ থেকে যেসব কাঁচামাল আমদানি করা হয় তার একটি অংশ প্রক্রিয়াজাতকরনের মাধ্যমে রপ্তানি হয়। অতীতে এমন হয়ে আসলেও এবার ব্যাতিক্রম। আশংকা করা হচ্ছে আমদানির নামে ওভার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়েও কাঙ্ক্ষিত গতি আসেনি। জুলাই থেকে ডিসেম্বর এ ছয় মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে এক হাজার ৭৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। অন্যদিকে এ সময়ে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৬৩১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
এদিকে, বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ধারাবাহিক কমছে। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। আবার আমদানিজনিত চাপে দেশের ভেতরে বেড়েছে ডলারের চাহিদা। ফলে চাহিদার তুলনায় ডলারের যোগান কমে গেছে। এ কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন ঘটছে। এক বছরের ব্যবধানে প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় চার টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গ্রাহক পর্যায়ে বর্তমানে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৪ টাকা ৭০ পয়সায়। রেমিট্যান্স আরো কমলে ডলারের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে টাকার অবমূল্যায়ন আরো বাড়বে। এতে রপ্তানি আয়ের ওপর চাপ পড়বে আরো বেশি।
লেনদেন ভারসাম্যের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পণ্যবাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৪৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে চেয়ে প্রায় নয়গুণ। আর এটি পুরো অর্থবছরের চেয়ে তিনগুণেরও বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চলতি হিসাবের ঘাটতি ছিল ১৪৮ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছরে লেনদেন ভারসাম্য ৪২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
হিসাবে দেখা গেছে, আমদানির জন্য অনেক বেশি ব্যয় হয়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে আগের অর্থবছরের ছয় মাসের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এ সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৯১ দশমিক ২৬ শতাংশ। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪৫১ কোটি ১০ লাখ ডলার। পুরো অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৯৮৪ কোটি ২০ লাখ ডলার।
আমদানি ব্যয় দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় দেশের অর্থ পাঁচার হয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। তারা বলছেন, প্রকৃত আমদানি বাড়লে তাহলে অর্থনীতিতে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকা নেই।  কিন্তু আমদানির নামে অর্থ যদি পাচার হয় তাহলে ফল নেতিবাচক হবে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উত্স রেমিট্যান্স। কিন্তু গত অর্থবছর জুড়েই দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ নিম্নমুখী ধারায় ছিল। সম্প্রতি রেমিট্যান্স ইতিবাচক ধারায় ফিরলেও তা এখনো আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৬৯৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স আসে ৬১৬ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ।
এ বিষয়ে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম ইত্তেফাককে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের রপ্তানি ও আমদানির ধারা দেখলে দেখা যায় এ দুটির মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই সামঞ্জস্য হচ্ছে না। আমদানির ক্ষেত্রে মূলধনী যন্ত্রপাতির বাইরে পেট্রোলিয়াম, খাদ্য পণ্য প্রভৃতি অনেক বেশি আমদানি হচ্ছে। বিনিয়োগেও শ্লথ অবস্থা দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে যেভাবে মূল্য পতন হচ্ছে আমদানির ক্ষেত্রে সেভাবে হচ্ছে না। এতে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। আমদানি-রপ্তানির নামে অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং এবং আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে কিনা সে বিষয়টা খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে।
উল্লেখ্য, রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় যেটুকু বেশি, তার পার্থক্যই বাণিজ্য ঘাটতি। আর চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ