• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

ভ্যাটের লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে না বৃহৎ করদাতা ইউনিটের সাত মাসে আদায় বেড়েছে ১৭ শতাংশ, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৩৭ শতাংশ

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

বৃহৎ অঙ্কের ভ্যাট পরিশোধ করে – এমন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায় করা ভ্যাট লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আদায় হওয়া ভ্যাটের ৬০ শতাংশের বেশি আদায় করে বৃহৎ করদাতা ইউনিট বা এলটিইউ-ভ্যাট বিভাগ। এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এ বিভাগে ভ্যাট আদায় বেড়েছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চাইতে ১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। অথচ চলতি অর্থবছর এলটিইউ-ভ্যাট বিভাগের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩৭ শতাংশ।
এলটিইউ-ভ্যাট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ বিভাগের ভ্যাট আদায় বেড়েছিল যথাক্রমে ২১ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও সাড়ে ১৯ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতের বছরগুলোর ভ্যাট আদায়ের ধারাবাহিকতা বিবেচনায় চলতি অর্থবছর প্রায় ৩৭ শতাংশ ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কার্যত অসম্ভব। আগামী পাঁচ মাসে অর্থনৈতিক কার্যক্রম কিংবা বকেয়া ভ্যাট আদায়ে অস্বাভাবিক কোন অগ্রগতির সম্ভাবনা নেই, যাতে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
গত অর্থবছর ৩৬ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা আদায় হলেও চলতি এবার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৫০ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। গত জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ২৭ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। আর পরবর্তী পাঁচ মাসে আদায় করতে হবে ২৬ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা।
এলটিইউ-ভ্যাট বিভাগের একজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, আগামী কয়েক মাসে বকেয়া ও মামলায় আটকে থাকা বেশকিছু ভ্যাটের অর্থ আদায় হবে বলে আশা করছি। তা সত্বেও এত বিশাল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবেনা বলেই মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবভিত্তিক হয়নি। সূত্র জানায়, আলোচ্য সময়ে ভ্যাটের বড় খাত ব্যাংক খাত থেকে প্রবৃদ্ধি অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। গত সাত মাসে ব্যাংক খাতের সেবার বিনিময়ে প্রাপ্ত ফি’র ভ্যাট আদায় বেড়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। এলটিইউ ভ্যাটের কমিশনার মতিউর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, ব্যাংকের গ্রাহকের উপর আবগারি শুল্ক আগের চাইতেও কমিয়ে ফেলতে হয়েছে। ফলে এ খাতেই প্রায় ৭শ’ কোটি টাকা কম আদায় হবে। এছাড়া টেলিটক, বিটিসিএল, জ্বালানি খাতসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। অন্যতম বড় খাত সিগারেট থেকেও কাঙ্ক্ষিত হারে ভ্যাট আদায় বাড়ছে না। তা সত্বেও আমাদের প্রচেষ্টায় প্রবৃদ্ধি সাড়ে ১৭ শতাংশ করতে পেরেছি, যা গত কয়েক মাসে ভ্যাটের গড় আদায়ের চাইতে বেশি।
চলতি অর্থবছর ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা এ লক্ষ্যমাত্রাকে অবাস্তব আখ্যা দিয়ে তা অর্জন সম্ভব হবেনা বলে ইতিমধ্যে মত দিয়েছেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইত্তেফাকে বলেন, রাজস্ব আদায় সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২ শতাংশ বাড়তে পারে। কিন্তু অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এমন বিশেষ কোন গতি আসেনি যে, ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। ফলে অতীতের ন্যায় এবারো লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনতে হবে।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, গত সাত মাসে সার্বিক রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অন্তত ১৪ হাজার কোটি টাকা কম হয়েছে। পরিস্থিতি আঁচ করে ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রণালয় এনবিআরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকায় সংশোধন করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ