গত এক বছরে কৃষকের ১০ টাকার অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ৯৪ হাজার। এক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার দুই দশমিক ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হাল নাগাদ প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬ সাল শেষে কৃষকের ১০ টাকার অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৯০ লাখ ৮৩ হাজার। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯২ লাখ ৩৭ হাজারে। ১০ টাকার হিসাবের বাইরে ৫০ টাকা ও ১০০ টাকার অ্যাকাউন্ট মিলে সুবিধা প্রাপ্ত বিশেষ এসব অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৭৪ লাখ ৩৩ হাজার ২১৭টি।
জানা গেছে, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির বড় অংশই ছিল আর্থিক সেবা খাতের বাইরে। তাদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে বিশেষ ব্যবস্থায় অ্যাকাউন্ট খোলার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এসব শ্রেণি পেশার মধ্যে রয়েছে কৃষক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতাভোগী, মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র জীবনবীমা পলিসি গ্রহীতা, অতিদরিদ্র উপকারভোগী, অতি-দরিদ্র মহিলা উপকারভোগী, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির সুবিধাভোগী, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুস্থ পুনর্বাসনের অনুদানপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ। এছাড়া ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিক, চামড়া ও পাদুকাশিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিক, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুস্থ পুনর্বাসনের অনুদানপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, স্কুলের শিক্ষার্থী, কর্মজীবী পথশিশু-কিশোর, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে অনুদানপ্রাপ্ত দুস্থ ব্যক্তি, আইলাদুর্গত ব্যক্তি, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ন্যূনতম ১০ টাকা, ৫০ টাকা এবং ১০০ টাকা জমা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিয়ম করা হয়। এগুলোয় সর্বনিম্ন জমার বাধ্যবাধকতাও তুলে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচিতে ব্যাংক হিসাব খোলা কার্যক্রমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে কৃষকদের অন্তর্ভুক্তি। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে খোলা বিশেষ অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে মোট ৫৩ শতাংশ হিসাব কৃষকদের। এসব হিসাবে মোট জমার পরিমাণ ২৮১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। কৃষি কর্মকান্ডে সরকারি সহায়তার অংশ হিসেবে সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন ভর্তুকি প্রদানসহ অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। সরকারি ভর্তুকি প্রাপ্ত এমন হিসাব সংখ্যা ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৬৩০টি এবং এসব হিসাবে জমার পরিমান ৪৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে ১০ টাকার কৃষকের হিসাবের মধ্যে ২৪ হাজার ২৪টি হিসাবের মাধ্যমে উপকারভোগীদের মাঝে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব ২০০ কোটি টাকার তহবিল হতে পুন:অর্থায়নকৃত ঋণ বা অন্যান্য ঋণ বিতরণ করা হয়েছে যার পরিমান ৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ অতিদরিদ্র। গ্রামাঞ্চলে অতিদরিদ্র মানুষের জীবনযাপনে সহায়তা ও আপদকালীন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মাধ্যমে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এদের দৈনিক ভিত্তিতে ২০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। এই শ্রেণির ৪৫ লাখ ৮৩ হাজার জনের ব্যাংকে সঞ্চয় ৩৭৭ কোটি টাকা। ১০ টাকার অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয় কৃষকদের মাধ্যমে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ৯২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯০ জন কৃষক এই হিসাবে জমা রেখেছেন ২৮২ কোটি টাকা।
মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে ১৮২ কোটি টাকা। তৈরি পোশাকশিল্পের ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯২২ শ্রমিক জমা রেখেছেন ১১৫ কোটি টাকা। ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৪৬জন প্রতিবন্ধী ১৮ কোটি জমা করেছেন। এ ছাড়া ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় ৩৩ হাজার ১২৭ জন ১০৩ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র জীবনবীমা কর্মসূচি গ্রহীতারা ১২ কোটি টাকা, এলএসবিপিসি কারিগররা ২ কোটি ৩ লাখ টাকা, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ৭০ লাখ টাকা জমা রেখেছেন।
মানুষের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে কাজ করছে সরকারি ৮ ব্যাংক। এগুলো হচ্ছে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। তথ্য অনুসারে, সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত উক্ত ৮টি ব্যাংকের মধ্যে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১০ টাকা (কৃষকের হিসাব ব্যতীত), ৫০ টাকা ও ১০০ টাকায় খোলা মোট পুঞ্জীভূত হিসাবের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে সোনালী ব্যাংক লি. (৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৫২টি হিসাব)। এছাড়া উক্ত ব্যাংকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতাভোগী হিসাব খাতে সর্বোচ্চ ২১ লাখ ৭১ হাজার ৬০৩টি হিসাব খোলা হয়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে অগ্রণী ব্যাংক লি. কৃষকের ১০ টাকার হিসাব ব্যতীত ১০, ৫০ ও ১০০ টাকায় মোট ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৫টি হিসাব খুলে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লি. এবং বেসিক ব্যাংক লি. এর হিসাব সংখ্যা এ ৮টি ব্যাংকের মধ্যে সর্বনিম্ন।