বহুল আলোচিত নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আইন নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনটি প্রয়োজনীয় সংশোধন করার জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনা থাকলেও কার্যত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সেই পথে হাঁটছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বরং ব্যবসায়ীদের পাশ কাটিয়ে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন ছাড়াই নতুন আইনের বিধি চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অনুমোদনও নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এটি ভেটিংয়ের (আইনগত ত্রুটি যাচাই-বাছাই) জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোরও প্রক্রিয়া চলছে। এমন পরিস্থিতিতে এর তীব্র বিরোধিতা করে সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভঁইয়াকে চিঠি পাঠিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
২০১২ সালে সংসদে পাশ হওয়া আইনটি ২০১৫ সাল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও আইনটির বেশকিছু মৌলিক ইস্যুতে ব্যবসায়ীদের সরাসরি বিরোধিতা ছিল। ফলে নানা উদ্যোগ নিয়েও শেষ পর্যন্ত এনবিআর তথা অর্থ মন্ত্রণালয়কে পিছিয়ে আসতে হয়েছে। সর্বশেষ গত জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কায় শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দুই বছরের জন্য বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেওয়া হয়।
অবশ্য এই দুই বছরের মধ্যে বিদ্যমান আইনের আওতায় ভ্যাট কার্যকর হলেও অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলের মত বিষয়ে ব্যবসায়ীদের অভ্যস্ত করার উদ্যোগ নেয় রাজস্ব প্রশাসন। এ জন্য বিদ্যমান ১৯৯১ সালের আইনের বেশকিছু বিধি’র পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। এ লক্ষ্যে বিধির সংশোধনীর খসড়া তৈরি করে এফবিসিসিআইতে পাঠানোর কথা। কিন্তু এফবিসিসিআইয়ের অভিযোগ, তাদের কাছে পাঠানো বিধি বিদ্যমান আইনের প্রস্তাবিত বিধি’র আড়ালে মূলত নতুন আইনের বিধি। এর উপরই মতামত চাওয়া হয়েছে। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে এনবিআরে চিঠি পাঠায় এফবিসিসিআই। এছাড়া এনবিআরের এমন উদ্যোগে ব্যবসা কার্যক্রম জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের আরেক প্রভাবশালী সংগঠন ঢাকা চেম্বার (ডিসিসিআই)। এফবিসিসিআইতে পাঠানো এক চিঠিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনের বিধিমালা সংশেধন করার কথা থাকলেও এর মধ্যে ২০১২ সালের আইনের বেশকিছু ধারা ও বিধি সংযোজন করা হয়েছে। এফবিসিসিআই সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে সংগঠনটি এ বিষয়ে অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠন ও চেম্বারের মতামত চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। মতামত পাওয়ার পর এ বিষয়ে এনবিআরকে ফের চিঠি পাঠানো হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, ভ্যাট ইস্যুতে পেছনের দরজা দিয়ে কোন কিছু করার দিন শেষ। কিন্তু এনবিআর কৌশলে সেই কাজটিই করতে চাইছে। তিনি বলেন, আমরা এনবিআরকে বলেছিলাম, একটি স্বাধীন সংস্থা দিয়ে নতুন ভ্যাট আইনের প্রভাব বিশ্লেষণের (ইমপেক্ট অ্যানালাইসিস) করার জন্য। এছাড়া ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের কোথায় কোথায় কারিগরি ত্রুটি রয়েছে, তা চিহ্নিত করার জন্য। এর কিছুই করা হচ্ছে না।
যোগাযোগ করা হলে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া সম্প্রতি এফবিসিসিআইয়ের পাঠানো চিঠিটি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। ইত্তেফাককে বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাদের সঙ্গে আলোচনা আগে প্রস্তাবিত বিধিটি ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবেনা।
সূত্র জানিয়েছে, এনবিআরের অতি উত্সাহী একটি পক্ষ ভ্যাট আইনটি নিয়ে একতরফাভাবে এগিয়ে যেতে চাচ্ছে। নতুন আইনের সফটওয়্যারে পরিবর্তনে সমস্যার বিষয়টিকে এক্ষেত্রে সামনে আনা হচ্ছে। অন্যদিকে সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক ভিয়েতনামের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধেও বেশকিছু অভিযোগ উঠেছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ জি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেই এর সমাধান খোঁজা উচিত। নইলে কার্যকর সমাধান আসবে না। বিশেষত ১৫ শতাংশ ভ্যাট হার খুবই বেশি। এটি কমানো উচিত।