বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, উচ্চ আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার জামিনে বাধা দিচ্ছে সরকার। আপিল বিভাগে সরকার হস্তক্ষেপ করে বিএনপি নেত্রীকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ আজ বেগম জিয়ার জামিনের আদেশ দুই মাস স্থগিত করেছেন। এখন পর্যন্ত এমন ঘটনা আর ঘটেনি। এই আদেশ সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন।
তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজেই বলেছেন খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির অভিযোগে সাজা দেয়া হয়নি। বিশ্বাস ভঙ্গ করার জন্য এ সাজা। এই মামলায় জামিন পাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এটি তার আইনগত অধিকার। কিন্তু হচ্ছে না। কারণ সরকার মাস্টারপ্ল্যান করে রেখেছে। আর এই মাস্টাপ্ল্যানের বাইরে দেশে সাংবিধানিক কোন প্রতিষ্ঠানই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।
খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত হওয়ায় সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রায়ে বিএনপি বিক্ষুদ্ধ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের মামলায় একজন সাধারণ মানুষের জামিন হয়ে যায়। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন হলো না। অথচ জামিন পাওয়া তার আইনগত অধিকার।’
মির্জা ফখরুল বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে যেভাবে দেশ ছেড়ে যেতে হয়েছিল। সেদিন থেকেই আমরা বলছিলাম বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শেষ হয়ে গেছে। আজকের রায় সেটাই প্রমাণ করলো। এ রায়ে প্রমাণিত হলো বেগম জিয়া ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ক্ষোভের সঙ্গে বলছি- এই আদেশে সরকারের যে ইচ্ছা, সেই ইচ্ছাই প্রতিফলিত হয়েছে।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশনেত্রীকে এভাবে বন্দি করে রাখার একটাই উদ্দেশ্য গণতন্ত্রকে চূড়ান্তভাবে কবর দিয়ে দেয়া। চালু একটা কথা আছে- কফিনের শেষ পেরেকটি মেরে দেয়া।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, দেশনেত্রীকে জামিন না দিয়ে কফিনে শেষ পেরেকটি মারা হয়েছে আজকে। আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগের ওপর ভর করে, তাদেরকে ব্যবহার করে এভাবে মানুষের অধিকারগুলোকে হরণ করে নিচ্ছে। আমরা এই অন্যায়-অত্যাচার এবং বিচার বিভাগকে এভাবে ব্যবহার করার তীব্র প্রতিবাদ করছি, নিন্দা জানাচ্ছি।’
এসময় খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, গণতন্ত্রকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার জানান মির্জা ফখরুল।
জামিন নিয়ে সরকার কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘খুব কৌশলে যাচ্ছে কিন্তু। কৌশলটা হচ্ছে জামিন স্থগিত করে দিয়েছে, জামিন নাকচ করেনি। এরপর শুনানি হবে লিভ টু আপিলের। অর্থাৎ এভাবে ক্রমান্বয়ে ক্রমান্বয়ে যেতে থাকবে এবং তাকে (খালেদা জিয়া) আটকে রাখা হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা জামিন দিয়েও করতে পারতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যে ন্যুনতম সুযোগ-সুবিধাগুলো আদালতে তিনি পাচ্ছেন না।’
তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছরের দণ্ড হলে সাধারণত আপিল করলেই জামিন হয়ে যায়। সেই মামলা জামিন পাওয়াটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা তার আইনগত অধিকার। এখন পর্যন্ত এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি যে, পাঁচ বছরের সাজায় উচ্চ আদালতে জামিন পায়নি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রথম থেকে লক্ষ্য করেছি, দেশনেত্রীর জামিন ও তাকে কারাগার থেকে বের করে আনার যে আইনি প্রক্রিয়া, সেই আইনি প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত সচেতনভাবে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। সরকার সেই বাঁধা দিচ্ছে।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা গতকাল (রবিবার) আদালতে গেছেন, তারা দেখেছেন যে কিভাবে আদালত কক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে পুরোপুরি ঘিরে রেখেছে। আগে জানতাম বাইরে, এখন দেখছি ভেতরেও পুরোপুরি।’এমনকি প্রধান বিচারপতির এজলাসের বাইরে পর্যন্ত। কিছু কিছু লোককে ভেতরে ঢুকতে দেখেছি আর্মসসহ। এটা আমরা দেখেছি। আমার মনে হয়, পৃথিবীর কোনো দেশে এরকম নজির রয়েছে। এই অবস্থায় এই দেশ চলে গেছে’ যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে বন্দি রেখে তাদের যে নীলনকশা, সেই নীলনকশা অনুযায়ী তাদের মতো করে একতরফা নির্বাচন দেখিয়ে আবার ক্ষমতায় চলে আসতে চায়। ইতোমধ্যে আপনারা শুনেছেনও ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এটা এখন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এটা ডিসাইডেড, ডান।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।