বৈশাখ মানে বড় উত্সব। দেশব্যাপী এখন চলছে নতুন বছরকে বরণ করার প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতির অংশ হিসাবে কেনাকাটাও বাড়ছে। ফলে ব্যবসায়িদেরও বিক্রি ব্যাপক বেড়ে যায়। এসব কেনাকাটা বা লেনদেনে নগদ অর্থের পরিবর্তে কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ভিসা, মাস্টারকার্ড আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) সহ বিভিন্ন ধরণের কার্ডে কেনাকাটায় উত্সাহিত করতে বিশেষ অফারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন পোশাক ও গৃহস্থলির পণ্য কেনাসহ বিপণিবিতান, পর্যটন কেন্দ্র এবং রেস্টুরেন্টগুলোতে কার্ডে এসব অফার মিলছে। ব্র্যান্ড ও পণ্যভেদে থাকছে বিভিন্ন পরিমাণে মূল্যছাড়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানভেদেও কার্ডে মিলছে নানা অফার। কার্ডের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন শপিংয়ে ক্যাশব্যাক অফার রয়েছে। নগদ টাকার বিকল্প হিসাবে গ্রাহকরা প্রতিটি লেনদেন ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় কিংবা ক্যাশব্যাক পাচ্ছেন।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন, উত্সবকেন্দ্রিক ছাড়ের মূল উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং। এর পাশাপাশি কার্ডের লেনদেন ও গ্রাহক বাড়ানোও অন্যতম লক্ষ্য। গ্রাহকদের কিছুটা সুবিধা দিতে ব্যাংকগুলো এ উদ্যোগ নিয়ে থাকে।
আগামী ১৪ এপ্রিল শনিবার পহেলা বৈশাখ। যারা অফার দিচ্ছে তাদের বেশিরভাগই গত ১ তারিখ শুরু করে। চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। আবার কোনো কোনো অফার শুধু নববর্ষের দিনটির জন্য। নামিদামি কিছু রেস্টুরেন্টে সকালে পান্তা-ইলিশ এবং দুপুর ও রাতের খাবারের ক্ষেত্রে নববর্ষের দিনটিতে ছাড় ঘোষণা করেছে। কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের অফার দেবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত।
এবছর যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যারা ছাড় ঘোষণা করেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও লঙ্কাবাংলা ফিন্যান্স। দেশে সাধারণত ভিসা, মাস্টারকার্ড ও আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দেয় ব্যাংকগুলো।
ব্র্যাক ব্যাংক তাদের সব কার্ডধারীর জন্য ৬৩টি ফ্যাশন হাউসের সব ধরনের কাপড়ের ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, ৩২টি রেস্টুরেন্টে খাবারের ওপর ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে।
পূবালী ব্যাংকের কার্ডধারীরা ২২ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন আহং, স্টাইলসেল, জারা, নাগরদোলা, লিলাবালি, সেলাই ঘর, ও নকশীতে। আর শপিং ওয়ার্ল্ড, মেলা, এসএ ওয়ার্ল্ড, ওমেন্স ওয়ার্ল্ড এবং লেদারেক্সে ১০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে এ ব্যাংকের কার্ডধারীদের। অনলাইন দোকানগুলোতে অ্যামেক্স কার্ডধারীরা ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাচ্ছেন। এছাড়া আমেক্স গ্রাহকরা ঢাকার শীর্ষস্থানীয় ১৬টি রেস্টুরেন্টে একটি কিনলে একটি ফ্রি সুযোগ পাচ্ছেন। ঢাকা ব্যাংক তাদের সব কার্ড হোল্ডারের জন্য আড়ংয়ে ১০ শতাংশ ক্যাশব্যাক ও মিনাবাজারে ৭ শতাংশ ক্যাশব্যাক দিচ্ছে। এছাড়া দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন হাউজগুলোতে ২২ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা আছে বৈশাখ উপলক্ষে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের কার্ড হোল্ডারদের জন্য এ বৈশাখে বিভিন্ন জুয়েলারি, লাইফস্টাইল, মেকআপ ও জুতার দোকানে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
লাইফস্টাইল, জুয়েলারি, ডাইনিং বা সাজগোজে বিশেষ ছাড়ের সুবিধা রেখেছে লঙ্কাবাংলা ফিন্যান্স লিমিটেড। এছাড়া নির্দিষ্ট কয়েকটি রেস্টুরেন্টে একটি কিনলে একটি ফ্রি দিচ্ছে তারা। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের কার্ডের কেনাকাটায় বিভিন্ন দোকানে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ ছাড় রয়েছে ক্রেতাদের জন্য। ইস্টার্ন ব্যাংকসহ আরও কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবার বৈশাখে ক্রেতাদের জন্য কিছু ছাড়ের সুবিধা রাখছে।
সাউথ ইস্ট ব্যাংক তাদের সব ক্রেডিট কার্ড হোল্ডারের জন্য ৩৪টি ফ্যাশন হাউজের সব ধরনের কাপড়ের ওপর ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, ১১টি রেস্টুরেন্টে সব খাবারের ওপর একটি কিনলে একটি ফ্রি পাওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে।
বৈশাখে ক্রেতাদের জন্য বিশেষ ক্যাশব্যাক সুবিধা রেখেছে বিকাশ। বিকাশ এ বছর যে কোনো বৈশাখী কেনাকাটায় ৬৭টি ব্র্যান্ডের ৬০০টির বেশি দোকানে ২০ শতাংশ ক্যাশব্যাক দিচ্ছে। এছাড়া ডাচ্বাংলা ব্যাংকের রকেট মোবাইল পেমেন্ট ব্যবস্থায় নানা রকম সুবিধা আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশের ব্যাংকগুলোর মোট কার্ডের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৪ লাখ। এর মধ্যে ডেবিট কার্ড রয়েছে ১ কোটি ৩ লাখের মতো। ক্রেডিট কার্ড রয়েছে ৯ লাখের কিছু বেশি। বাকি প্রায় ২ লাখ হলো প্রিপেইড কার্ড। সক্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট রয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ।