মাহে রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে রোজাদারের জন্য রয়েছে দৈহিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধন, আত্মিক ও নৈতিক অবস্থার উন্নতিসহ অশেষ কল্যাণ ও উপকার লাভ করার সুযোগ। রোজা মানুষকে সংযমী ও শুদ্ধ করে এবং অশ্লীল, মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।
রোগাক্রান্ত অবস্থায়ও অনেকেই রোজা রাখতে চান। অনেকে এমনো বলেন- ‘মরি মরব, বাঁচি বাঁচব, তবু রোজা ছাড়ব না’। রমজানে বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস, পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার, শ্বাসকষ্ট, হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদিতে ভুগছেন, তাদের সমস্যা হবার সম্ভাবনা থাকে। তবে রোজা রাখা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকলেও রোজা রাখতে অনেকেই প্রবল আগ্রহী। তারা যদি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজার মাসের জন্য ওষুধ সেবনবিধি ঠিক করে নিতে পারেন, তবে সহজেই রোজা রাখতে পারবেন। এতে রোজা ভাঙার বা রোজা থেকে বিরত থাকার কোনো প্রয়োজন হয় না।
রোজা, রোগ ও আপনার স্বাস্থ্য: রোজা রাখার উদ্দেশ্য শরীরকে দুর্বল করে অকর্মন্য করা নয়, বরং শরীরকে সামান্য কিছু কষ্ট দিয়ে দৈহিক ও আত্মিক উত্কর্ষ সাধন। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে রোজায় ক্ষতি না হয়ে বরং বহু রোগব্যাধির প্রতিরোধক এবং আরোগ্যমূলক চিকিত্সা লাভে সহায়ক হয়। রোজায় স্বাস্থ্যের সমস্যার চেয়ে বরং স্বাস্থ্যের উপকারই বেশি হয়।
ডায়াবেটিক রোগী: রোজা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রোগীদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ ও রহমতস্বরূপ। ডায়াবেটিক রোগীরা সঠিক নিয়মে রোজা রাখলে নানা রকম উপকার পেতে পারেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল উপায় হলো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, আর রোজা হতে পারে এক অন্যতম উপায়। এতে সহজেই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সহজ ও সুন্দরভাবে করা যায়। যারা ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল নন, তাদের ক্ষেত্রে রোজা রাখা হতে পারে আদর্শ চিকিৎ ব্যবস্থা। যারা ইনসুলিন নেন তাদের ক্ষেত্রেও রোজা অবস্থায় ওষুধের মাত্রা কমাতে সহায়ক। শুধু রক্তের গ্লুকোজই নয়, রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণেও রোজা মোক্ষম। এর সঙ্গে সঙ্গে রোজা রোগীকে সংযম, পরিমিতিবোধ ও শৃংখলার শিক্ষা দেয়, যা ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় অপরিহার্য।
রক্তের কোলেস্টেরল: যাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, রোজা তাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। রোজা ভালো কোলেস্টেরলকে (এইচ ডি এল) বাড়াতে এবং মন্দ কোলেস্টেরলকে (এল ডি এল) ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে যাহায্য করে।
লেখক: ডিন, মেডিসিন অনুষদ, অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়