বহুল আলোচিত স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা আগামী বাজেটে ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হচ্ছে। বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি স্বর্ণ আমদানি ও বিক্রিতে নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে। স্বর্ণ আমদানি-কারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস), বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), এনবিআরের আওতাধীন শুল্ক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সমন্বয়ে ওই কমিটি খসড়াটি তৈরি করে। চলতি সপ্তাহে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ওই নীতিমালাটি উত্থাপন হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বাজেটের কিছু বিষয় নিয়ে এনবিআরকে একটি নোট পাঠান। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, এবারে স্বর্ণ আমদানির ব্যবস্থা ঘোষণা করবো। জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন এ জন্য প্রস্তাব প্রণয়ন করছে। এটি সত্বর চূড়ান্ত করতে হবে।
খসড়ায় স্বর্ণ আমদানি সম্পর্কে বলা হয়েছে, অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে প্রস্তুতকারী বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি স্বর্ণবার আমদানি করা যাবে। প্রাথমিকভাবে দুটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে স্বর্ণ আমদানির জন্য অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক মনোনীত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে অন্যান্য ব্যাংককেও এ সুযোগ দেওয়া হবে।
ডিলার ব্যাংক স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। তবে এ জন্য দেশে প্রচলিত আমদানি নীতি আদেশ ও শুল্ক আইনের বিধান মেনে বন্ড কমিশনারেট থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হবে। স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানির ক্ষেত্রে গুচ্ছ প্রণোদনার সুপারিশ রাখা হয়েছে। নীতিমালা জারির ৬ মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের ভ্যাট নিবন্ধিত হতে হবে এবং তাদের মজুদ স্বর্ণালঙ্কারের পরিমাণ ঘোষণা দিতে হবে। স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কার ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে হলমার্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার কথাও বলা হয়।
অনুমোদিত ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে অনাপত্তি সংগ্রহ করতে হবে। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে অনাপত্তি দেবে। কিন্তু এডি ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানি করা স্বর্ণ শুধু ভ্যাট কমিশনারেটে নিবন্ধিত অভ্যন্তরীণ স্বর্ণালঙ্কার ব্যবসায়ীরাই কিনতে পারবে। তার আগে ওই সব ব্যবসায়ীর জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হবে। পাশাপাশি তাদের সংশিষ্ট ব্যবসায়িক সংগঠনেরও সদস্য থাকতে হবে। এডি ব্যাংক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের চাহিদা দাখিলের আহ্বান করবে। স্বর্ণালঙ্কার ব্যবসায়ীরা চাহিদা দাখিলের সময় নিরাপত্তা জামানত হিসাবে ৫ ভাগ অর্থ এডি ব্যাংককে জমা দিতে হবে।
এছাড়া প্রস্তুতকৃত স্বর্ণালঙ্কারে আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদনযোগ্য ধাতু বা অবচয়ের পরিসীমা প্রতিপালন, হলমার্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক, বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা প্রদান, হাতে ও মেশিনে তৈরি অলঙ্কার রপ্তানির ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর সুনির্দিষ্টকরণসহ কিছু সুপারিশ রয়েছে খসড়ায়।
দেশে দীর্ঘদিন ধরেই একটি কার্যকর স্বর্ণ নীতিমালার দাবি রয়েছে। এর অভাবে বিশাল আর্থিক লেনদেনের এ খাতটিতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সর্বশেষ গত বছর আপন জুয়েলার্সের একাধিক শো রুমে অভিযান চালিয়ে বিশাল পরিমাণ ‘অবৈধ’ স্বর্ণ জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এ ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক তৈরি হয়। তারা ধর্মঘটও পালন করেন। এর পরই স্বর্ণ আমদানি ও বিক্রির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে নীতিমালার দাবি জোরালো হতে থাকে। পরবর্তীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে।