বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত ডিলারদের মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানির বিধান রেখে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বুধবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে কোনো স্বর্ণ নীতিমালা ছিল না। সেজন্য এ খাতে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছিল। এখন স্বর্ণ আমদানি করব, এতদিন তো আমদানি হত না, সব স্মাগল হত। কোনো দিন কোনো স্বর্ণ আমদানি এই দেশে হয়নি। এসব ব্যবস্থা একটি নিয়মের আওতায় আনার জন্য স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হলো। এখন বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি করে এদেশের ব্যবসায়ীরা তার সঙ্গে মূল্য সংযোজন করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে।
বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমদানিতে তেমন ট্যাক্স হবে না। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স ফি কত হবে সেটা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করবে।
বৈঠক শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে স্বর্ণের বাণিজ্যকে নিয়মের আওতায় আনার উদ্দেশ্যে এ নীতিমালা করা হচ্ছে। স্বর্ণ আমদানির পর ‘ভ্যালু অ্যাড করে’ আবার তা রপ্তানি করার সুযোগ থাকছে এই নীতিমালায়। এটার ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে একটা রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক হচ্ছে। এটার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিলার নিয়োগ করবে, যাদের মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানি হবে। কারা কারা আমদানি করতে পারবে সেই বৈশিষ্ঠ থাকবে। ফলে বৈধভাবে ব্যবসাটা ভালোভাবে চলতে পারবে। তিনি জানান, অনুমোদিত ডিলারগণ সোনার বার আমদানি করবে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি তথ্য ভাণ্ডার থাকবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বর্ণ আমদানিতে বন্ড সুবিধা থাকছে। আমদানি করে দেশের ভেতর অলংকার বানিয়ে তা বিদেশে রপ্তানি উন্মুক্ত করতে এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের রপ্তানিকারকদের নগদ প্রণোদনা সহায়তাসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমিও বরাদ্দ দেওয়া হবে। এছাড়া অলংকার তৈরি করে যারা দেশের মানুষের কাছে বিক্রি করবে, তারাও আমদানি করা স্বর্ণ ব্যবহার করতে পারবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনুমোদিত ডিলার সরাসরি স্বর্ণের বার আমদানি করতে পারবে। তবে ডিলার স্বর্ণের বার ছাড়া কোনো স্বর্ণালংকার বা অন্য কোনো ভাবে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবে না। স্বর্ণের বার আমদানির সময় ডিলার বন্ড সুবিধা নিতে পারবে। এসব ডিলার স্বর্ণালংকার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে স্বর্ণের বার বিক্রি করবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, নিবন্ধিত বৈধ স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা স্বর্ণালংকার রপ্তানিকারক সনদ নিতে পারবে। বৈধভাবে স্বর্ণালংকার রপ্তানি উৎসাহিত করতে রপ্তানিকারকদের স্বর্ণালংকার তৈরির কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতসহ বিভিন্ন প্রকারের প্রণোদনামূলক বিশেষ সহায়তা দেওয়া হবে। স্বর্ণালংকার রপ্তানির উদ্দেশ্যে আমদানি করা স্বর্ণেও ক্ষেত্রে ডিউটি ড্র-ব্যাক ও বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দেওয়া হবে।
নীতিমালায় পুরনো স্বর্ণ কেনাবেচায় স্বচ্ছতা আনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকের কাছ থেকে রিসাইকেল্ড বা পুরনো স্বর্ণ ক্রয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহক, বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের কপি এবং পূর্ণাঙ্গ যোগাযোগের ঠিকানা সংরক্ষণ করতে হবে। সরকার স্বর্ণের মান নির্ণয়, যাচাই ও নিয়ন্ত্রণে নিজস্ব মান প্রণয়ন করবে। স্বর্ণের মান যাচাই ও বিশুদ্ধ স্বর্ণের পরিমাণ যাচাই নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ল্যাবটেস্ট, ফায়ার টেস্ট বা হলমার্ক টেস্ট সুবিধাসহ পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে।