কানাডায় বার্ষিক বৈঠকের জন্য জড়ো হচ্ছে জি-৭ নেতারা। ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠকটি হবে এই বছরের সবচেয়ে তিক্ত বৈঠকগুলোর একটি। বৈঠকের আগ দিয়েই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন ফ্রান্স ও কানাডার নেতারা। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়, কানাডার লা মালবে শহরে অনুষ্ঠেয় জি-সেভেন শীর্ষ বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয়ের একটি হচ্ছে ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্কারোপ। তার বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে একজোট হচ্ছে কানাডা ও ইউরোপ। ট্রাম্প নিজেও সংঘাতের পথে যেতে প্রস্তুত।
ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠকটিতে সবার পরে আসবেন ট্রাম্প। যাবেনও সবার আগে। সম্প্রতি মিত্র দেশগুলো থেকে আমদানিকৃত ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি। তার এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে মিত্ররা।
শিল্পোন্নত দেশগুলির গোষ্ঠী জি-সেভেন’র সদস্য দেশগুলো হচ্ছে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান ও জার্মানি। স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার দেশগুলোর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
জি-সেভেন’র সদস্য দেশগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতির ৬০ শতাংশেরও বেশি অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রতি বছর, সদস্য দেশগুলো একটি বার্ষিক বৈঠকে বসে। সাধারণত বৈঠকগুলোতে অর্থনৈতিক ইস্যুই প্রাধান্য পায়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের প্রধান সমস্যাগুলো নিয়েও আলোচনা করেন নেতারা।
এইবারের বৈঠকের আগে ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্কারোপ নিয়ে ফ্রান্স ও কানাডার সঙ্গে ট্রাম্পের বিরোধ রয়েছে তুঙ্গে।
আয়োজক দেশ ক্যানাডা ও ইউরোপ ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে, তারা এই ভয়ভীতির সামনে নতি স্বীকার করবে না। তারা একযোগে ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতার ইঙ্গিত দিয়েছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন এক টুইটে লিখেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট একঘরে হয়ে থাকতে হয়তো প্রস্তুত। কিন্তু বাকি নেতারাও প্রয়োজনে ৬টি দেশের আলাদা চুক্তি করতে প্রস্তুত।
তার মতে, এই ৬টি দেশ কিছু মূল্যবোধ ও এক অর্থনৈতিক বাজারের প্রতিনিধিত্ব করে। ঐতিহাসিকভাবে এই জোট এক আন্তর্জাতিক শক্তি হয়ে উঠেছে, বলে জানান ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্প এমন বার্তার জবাব দিতে বিলম্ব করেননি। তিনি এক টুইট বার্তায় মন্তব্য করেন, দয়া করে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো ও প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনকে বলুন যে, তারা অ্যামেরিকার উপর বিশাল পরিমাণ শুল্ক চাপাচ্ছেন এবং আর্থিক নয়, এমন অনেক বাধা সৃষ্টি করছেন।
তিনি আরো বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বৃত্তের মাত্রা ১৫,১০০ কোটি ডলার। কানাডাও মার্কিন কৃষিপণ্য ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করে না। জি-সেভেন সম্মেলনে তিনি এই সব বিষয় তুলে ধরার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্কের প্রসঙ্গে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, শুল্ক আরোপের জন্য ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার অজুহাত হাস্যকর।
এদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে অনেকটা মৈত্রীসূচক আচরণ করেছেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন শুল্কারোপের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপকে আরো সংযমী ও সঙ্গত হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
এদিকে, ডয়েচে ভেলের খবরে বলা হয়, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল আশঙ্কা করছেন যে, দুই দিনের সম্মেলনের শেষে যৌথ ঘোষণাপত্র নিয়ে ঐকমত্য সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তবে আপোষের বদলে মতপার্থক্য মেনে নিয়ে ঘোষণাপত্র না প্রকাশ করাই সততার পরিচয় হবে বলে তিনি মনে করেন।