• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন

বিশ্বকাপ বাণিজ্যে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও রাশিয়ার অর্থনীতি কী চাঙ্গা হবে?

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন, ২০১৮

২০১০ সালে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসাবে যখন রাশিয়া নির্বাচিত হয় তখন সে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলনামূলক ভালো ছিল। পরবর্তীতে নানা মেরুকরণের কারণে সেদেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে। সাধারণত, বিশ্বকাপের কারণে আয়োজক দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশ থেকে পর্যটকরা আসায় অর্থনীতিতে গতি আসে। এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার অর্থনীতি কেমন হবে সে বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা। তবে রাশিয়ায় অর্থনীতি যেখানেই দাঁড়াক এতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
২০১০ সালে জিডিপির (মোট দেশজ উত্পাদন) হার ছিল ৪ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে এক দশমিক ৭ শতাংশ। রুশ সরকার বলছে, আসন্ন বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট দেশটির অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করবে। জানা গেছে,  এবার বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে মোট খরচ হচ্ছে ১১ বিলিয়ন ডলার। তবে কিছু ব্যয়বহুল অবকাঠামোর হিসাব তা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বকাপ উপলক্ষে রাশিয়ায় দুই লাখ ২০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান হবে। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহনসহ পর্যটন সম্পর্কিত খাতগুলো চাঙ্গা হবে।
স্পন্সর থেকে কম অর্থ পাচ্ছে ফিফা
ব্রাজিলে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ফিফার আয় হয়েছিল ৪৮০ কোটি ডলার। এর মধ্যে স্পন্সর থেকে ফিফা আয় হয়েছিল ১৬৩ কোটি ডলার। তবে এবার আয় কমে গেছে। ফিফা এ বছর স্পন্সর থেকে ১৪৫ কোটি ডলার আয় করেছে। ক্রীড়া গবেষণা সংস্থা নিয়েলসন স্পোর্টস রিসার্চ এমন তথ্যই দিয়েছে। গবেষণা সংস্থাটি বলছে, ২০১৫ সালের মে মাসে ফিফার গভর্নিং বডির দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে জনসন অ্যান্ড জনসন, ক্যাস্ট্রোল এবং কনন্টিনেন্টালের মতো বড় পৃষ্ঠপোষকরা ফিফার পাশ থেকে সরে যায়। এরপর থেকেই চীনা কোম্পানিগুলো ফিফার কাছাকাছি আসার সুযোগ পায়। বর্তমানে চীনের বৃহত্তম প্রোপার্টি কোম্পানি ওয়ান্ডা গ্রুপ ফিফার ৭ পৃষ্ঠপোষকের একটি। বাকিরা হলো কোকাকোলা, অ্যাডিডাস, গাসপ্রম, কাতার এয়ারওয়েজ, ভিসা এবং হুন্দাই।
বিশ্বকাপের ছোঁয়া বাংলাদেশের পোশাক শিল্পেও
বিশ্বকাপ ফুটবলে অন্যতম অনুসঙ্গ জার্সি। এর সঙ্গে খেলোয়াড় ও স্টাফদের কোচিং জ্যাকেটও প্রয়োজন। আর বিভিন্ন দলের ভক্তসহ সাধারণ দর্শকের জন্য জার্সি তো আছেই। এসব পোশাকের বড় অংশ গেছে বাংলাদেশ থেকে। এতে দেশে এসেছে মোটা অঙ্কের অর্থ। রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবল ঘিরে এক বিলিয়ন ডলার বা আট হাজার কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। এসব পোশাক রাশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপ শুরু হলেও এসব পোশাকের কাজ বা রপ্তানি শুরু হয়েছে গত ছয় মাস ধরেই।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমই এ বিষয়ে সঠিক তথ্য না দিতে পারলেও গার্মেন্টস খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রায় ১০০ কারখানায় এবারের বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে পোশাক উত্পাদন হয়েছে। কয়েক মাস ধরে পোশাক খাতে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক যে রপ্তানি তার পেছনে মূলত রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত ১১ মাসে                 পোশাক খাতের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা থেকেও ৩ শতাংশ বেশি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে  প্রায় ১০ শতাংশ। এ সময়ের সব পণ্যের গড় রপ্তানি    আয়ের তুলনায় এ হার বেশি। আর এক মাস পর এ বছর শেষে পোশাকের রপ্তানি কমপক্ষে ১২ শতাংশ বেশি হবে। সাধারণত বছরে গড় বৃদ্ধি ৩ থেকে ৪ শতাংশ হয়ে থাকে। বাকি বৃদ্ধি হচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপের সুবাদে।
টিভির বাজারও চাঙ্গা
ছোট টিভিতে খেলা দেখে সুবিধা হয় না। এজন্য দরকার বড় টিভি। আবার যাদের মোটেও টিভি নেই এ সময়ে টিভি কেনার লক্ষ্য নেন তারা। কারণ, বিশ্বকাপের সময়ে টিভি উত্পাদনকারী কোম্পানিগুলোও কিছুটা ছাড়ে টিভি বিক্রি করেন। তাছাড়া টিভি কিনতে গ্রাহকদের আগ্রহী করতে বিভিন্ন রকম পুরস্কারও ঘোষণা করেন। এবছরও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি দেশীয় টিভি উত্পাদনকারী কোম্পানিগুলোও টিভিতে ছাড় ও পুরস্কার ঘোষণা করেছে। তাই ফুটবল ভক্তরা ছুটছেন টিভির দোকানগুলোতে।
পণ্য বিক্রিতেও বিশ্বকাপ
বিশ্বকাপকে ঘিরে ‘প্রাণ আপ ফুটবল ম্যানিয়া’ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে প্রাণ বেভারেজ লিমিটেড। এ ক্যাম্পেইনে বলা হচ্ছে প্রাণ আপ কিনে রাশিয়ার টিকিট জিতুন। একইভাবে বিশ্বকাপকে ঘিরে অন্যান্য কোম্পানিও তাদের পণ্য বিক্রি করতে ক্যাম্পেইন করছে।
খেলা দেখানোর স্বত্ব থেকে আয় হবে বাংলাদেশের
রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ দেখানোর জন্য বাংলাদেশের তিনটি টেলিভিশন স্বত্ব পেয়েছে। এগুলো হলো, বিটিভি, মাছরাঙ্গা ও নাগরিক টিভি। এছাড়া ভারতের সনি পিকচার নেটওয়ার্ক বাংলাদেশে বিশ্বকাপ দেখানোর স্বত্ব পেয়েছে। খেলা চলাকালীন  দেখানো বিজ্ঞাপন থেকে প্রচুর টাকা আয় করবে এসব টিভি।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page