• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

আয়করে জরিমানা বাড়ছে ১০ গুণ!

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন, ২০১৮

অর্থমন্ত্রীর সংসদে ঘোষিত বাজেটে আয়করের বিধান পালনের ব্যর্থতায় বড় ধরনের জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে আয়করে অন্তত সাত ধরনের ক্ষেত্রে জরিমানার বিধান রয়েছে। নতুন করে আরো একটি ক্ষেত্র বাড়ানোর পাশাপাশি জরিমানা একলাফে দশগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
অন্যদিকে কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কাছে করদাতার আর্থিক তথ্য থাকলে ওই তথ্য গোপন করলে বা ভুল তথ্য দিলে এ জন্য তিন বছরের কারাদণ্ড এবং এই দণ্ডকে আরো সুষ্পষ্ট করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে আয় গোপন করার প্রবণতা কমবে এবং আয়কর আদায় বাড়বে বলে মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে করদাতারা মনে করছেন, কর আদায়ে জেল-জরিমানায় অত্যধিক কড়াকড়ি আরোপ করা হলে মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যেতে পারে। তাদের মধ্যে করভীতি তৈরি হলে আয়করের আওতায় আসার উত্সাহ কমে যাবে।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, জরিমানার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের মূল লক্ষ্য উৎসে আয়কর আদায়কে কেন্দ্র করে। এনবিআরের আয়করের প্রায় ৬০ শতাংশ অর্থ আদায় হয় উৎসে আয়কর খাত থেকে। কিন্তু এ খাতে প্রচুর ফাঁকিও হয় বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো, কর ফাঁকি ও কর পরিহার রোধ করে রাজস্ব বাড়ানো। যারা ফাঁকি দেন, তাদের বিরুদ্ধে বেশ ‘শক্ত’ পদক্ষেপ নেব।
বর্তমানে কোনো করদাতার উৎসে কর সংক্রান্ত সনদ ইস্যু ও কর কর্তৃপক্ষকে উেস কর সংক্রান্ত রিটার্ন বা বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে এককালীন ৫শ’ টাকা দিতে হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে সর্বশেষ ধার্যকৃত করের ১০ শতাংশ বা ৫ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বেশি – ওই অর্থ জরিমানা গুণতে হবে। ক্রমাগত ব্যর্থতায় প্রতি মাসে আড়াইশ’ টাকার স্থলে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে।
কোনো প্রতিষ্ঠানের বেতনভোগী সব কর্মীর বেতন সংক্রান্ত বিবরণী দাখিল না করলে এবং উেস করের ছয় মাসের রিটার্ন দাখিল না করার ক্ষেত্রেও একই হারে জরিমানা প্রযোজ্য। রিটার্ন দাখিলে আইনত বাধ্য, এরূপ বেতনভোগী সব কর্মীর রিটার্ন সংক্রান্ত বিবরণ দাখিল না করার ক্ষেত্রেও এবার একই ধরনের জরিমানা আরোপের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সুদ বা মুনাফা বাবদ প্রদত্ত অর্থের উপর উেস কর্তিত করের বিবরণ দাখিলে ব্যর্থতা, লভ্যাংশ বাবদ প্রদত্ত অর্থের উপর উৎসে কর্তিত করের বিবরণ দাখিলে ব্যর্থতা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য স্থানে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) সনদ প্রদর্শনের ব্যর্থতার জন্য বিদ্যমান এককালীন ৫শ’ টাকার স্থলে ৫ হাজার টাকা এবং ক্রমাগত ব্যর্থতায় প্রতি মাসের জন্য ১ হাজার টাকা করে জরিমানা গুণতে হবে।
এছাড়া কোনো ব্যক্তি করদাতা সময়মত আয়কর রিটার্ন জমা না দিলে এবং সময়ের আবেদন না করে থাকলে পূর্বের বছরে ধার্য হওয়া করের উপর ১০ শতাংশ বা ১ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বেশি – ওই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আর রিটার্ন দাখিলের নির্ধারিত সময়ের পর প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা করে জরিমানা গুণতে হবে।
এছাড়া কোনো করদাতা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উেস করের রিটার্ন দাখিল না করলে বা বেতনভোগী কর্মীর বেতনভাতার তথ্য বা রিটার্ন দাখিল না করলে ওই করদাতার আয়কর রিটার্নকে অডিটের আওতায় আনা হবে। অন্যদিকে আয়কর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কাছে কোনো ব্যক্তির তথ্য চাওয়ার পর ওই ব্যক্তি তথ্য গোপন করলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে আয়কর কর্তৃপক্ষকে ভুল তথ্য দিলে তিন বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধানও যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এনবিআরের বাজেট সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান কর সংক্রান্ত নিয়ম সঠিকভাবে পরিপালন করেন না। অতীতে মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ পরিপালন হতো। কিন্তু এবার জরিমানা বাড়ানো এবং অডিটে আনার বাধ্যবাধকতা আরোপ হওয়ায় অনেকেই এসব ঝুঁকিতে পড়তে চাইবে না। এছাড়া অন্য সংস্থা বা বিভাগের কাছে থাকা ব্যক্তির আর্থিক তথ্যও স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনবিআরের সঙ্গে শেয়ার করার বিষয়টিও যুক্ত হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশেই এটি আছে। এ লক্ষ্যে এনবিআরে একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করা হবে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে আয়কর আদায়ে ইতিবাচক ফল আসবে। এছাড়া আগামী পাঁচ বছরে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত হওয়া সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি।
অবশ্য জরিমানা যৌক্তিক করার নামে করদাতাদের মধ্যে কর ভীতি তৈরি হয় কি না তা খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ইত্তেফাককে বলেন, কর ফাঁকি ঠেকাতে শাস্তি বা জরিমানার মাত্রা বাড়ানোর প্রস্তাব ঠিক আছে। তবে এটি যৌক্তিক হতে হবে। এর মাধ্যমে ভীতি তৈরি হলে করের আওতা সম্প্রসারণের উদ্যোগ ব্যাহত হতে পারে। নতুন করে অনেকেই করের আওতায় আসতে চাইবেন না। বিশ্বের কোনো কোনো দেশে এক বা দুইবার এ ধরনের ভুল বা পরিপালনের ব্যর্থতায় সতর্ক করার ব্যবস্থা থাকে। এখানেও এ ধরনের ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি চিন্তা করা যেতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ