‘যখন আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছি তখনই বাংলাদেশের বৃহত্তম অর্জনগুলো এসেছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই ঐক্য ছিলো সর্বোচ্চ শিখরে। এই ঐক্যবদ্ধতার কারণেই যুদ্ধোত্তর বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নের মূল স্রোতে ঢুকতে পেরেছিলো। সে সময় এই অর্থনীতির আকার ছিলো মাত্র ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। জাতির জনকের যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই যে চেতনা নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, সেই একই চেতনায় দীপ্ত হয়ে এগিয়ে গেছি অর্থনৈতিক মুক্তির পথে।’
গতকাল শনিবার কক্সবাজারের হোটেল সি প্যালেস-এ “বাংলাদেশ ক্রেডিট ইউনিয়ন ফোরাম ২০১৮” এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অফ বাংলাদেশ (সিসিইউএলবি) এই ফোরামের আয়োজক।
আয়োজক সংস্থার সভাপতি জোনাস ঢাকির সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমবায় অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার এবং মহাপরিচালক জনাব আব্দুল মজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অধ্যাপক মুহাম্মদ আবু ইউসুফ, এসিসিইউ-এর পক্ষ থেকে মিস এলিনেটা সানরে এবং কক্সবাজার জেলার অতিরক্তি ডেপুটি কমিশনার জনাব আশরাফ হোসাইন।
দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আসা এক হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি নিয়ে অনুষ্ঠিত এই ফোরামের আলোচ্য বিষয় ছিলো সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনে সমবায়ের ভূমিকা। ড. আতিউর এই উদ্যোগকে কার্যকর ও সময়োচিত হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, যদি চার হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদের অধিকারি সিসিইউএলবি-এর আওতাভুক্ত সমবায় সমিতিগুলোতে যথাযথ পেশাদারি মনোভাব সৃষ্টি করা সম্ভব হয় তাহলে নারীসহ এসব সমবায় সমিতির সকল সদস্যদের উদ্যেক্তা মনেবৃত্তি উৎসাহিত করা যাবে। এর ফলে এসডিজিতে সমাজ ও অর্থনীতির যে অন্তর্ভূক্তিমূলক বিকাশের কথা বলা হয়েছে তা বাস্তবে রূপান্তরিত হবে।
তবে এ জন্য এই ফোরামের নেতৃত্বকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন, ডিজিটাল প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, এবং এনজিও ও সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য সমবায় খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান সমবায় অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন ড. আতিউর।
তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষের উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনা ও যোগ্যতা রয়েছে, আর মানুষের এই উদ্যোক্তা মনোবৃত্তির বিকাশ নিশ্চিত করতে তাদের যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হয় তা হলো সমবায়। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ক্ষুধা, অতিদারিদ্র্য এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে এসডিজি-এর মূল লক্ষ্য অর্থাৎ ‘কাউকে পেছনা না ফেলে এগিয়ে যাওয়া’ সম্ভব হবে।