দিনের আলো ফুরিয়ে সন্ধ্যা নামে। প্রশাসন ভবনের সামনে নিভৃতে ঘুমিয়ে থাকা শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহার সমাধী ঘিরে মিলনমেলা বড় হতে থাকে। মিলনমেলায় শামিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীরা। এর পাশ দিয়ে পশ্চিমের দিকে চলে যাওয়া প্যারিস রোডের বাতিগুলো বাড়িয়ে দেয় সৌন্দর্যের মাত্রা।
চলুন যাই প্যারিস রোডের উত্তরে। গ্রন্থাগারের কাছে শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে সন্ধ্যার পর তেমন কারও আনাগোনা না থাকলেও জাতির জনকের হাত উঁচু করে দেওয়া ৭ মার্চের ভাষণের মুর্যালটি জীবিত রাখে এলাকাটিকে। আর শহীদ হবিবুর রহমান, ড. শামসুজ্জোহা ও সুখরঞ্জন সমাদ্দারের মুর্যালগুলো মনে করিয়ে দেয় তারা যেন বসে আছেন মঞ্চে। একটু এগোলে নজরে পড়ে কলাভবনগুলোর সামনে আমবাগান। আলো না থাকায় ওই আমবাগান ধারণ করে গহিন জঙ্গলের রূপ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যার পরে রাতের বেলার প্রতিদিনকার চিত্র এটি। দিনের বেলা শিক্ষার্থীদের হৈ-হুল্লোড়ে উৎসবমুখর থাকলেও সন্ধ্যা হলেই নীরব হতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটির চারদিক। কমতে থাকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। নীরব থাকলেও সেই সৌন্দর্য হৃদয়ে দোলা দেয়। কেউ কেউ জেগে থাকেন ক্যাম্পাসটির সেই সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। কেউ কেউ বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে হাঁটতে বের হন। ইবলিশের ঘাটবাঁধানো পুকুরে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালিয়ে যায় অজানা কেউ।
কিছু স্থান তখনও জেগে থাকে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নিপা সরকার বলছিলেন, প্যারিস রোড বা ইবলিশ চত্বর শান্ত হলেও জেগে থাকে ছাত্রীহল এলাকার পশ্চিম পাড়া, টুকিটাকি বা গ্রন্থাগারের পেছনের আমতলা। অনেকে আড্ডা জমান সেখানে। কেউ গান ধরেন। কেউ বা আবৃত্তি করেন। এভাবে রাত বাড়তে থাকে। শহীদ মিনার এলাকার বর্ণনা করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী আকিব খান বলেন, ঊর্ধ্বমুখী শহীদমিনারটি একা একা দাঁড়িয়ে আকাশটাকে যেন ছুঁতে চায়। আর কী যেন মিনতি করে! সামনের ল্যাম্পপোস্টগুলো মিনারটির পাদদেশে আলো ছড়িয়ে দেয়। মনে হবে আপন মনে শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে ব্যস্ত তারা।
এভাবে সৌন্দর্যময় ক্যাম্পাসে শেষ হয় রজনী। ভোর হয়। তখন আরেক রাতের অপেক্ষা করতে হয় উত্তরাঞ্চলের এই বিদ্যাপীঠের রাতের সেই অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য। আর ‘নিশিতে যাইও ফুলবনে’ গানটির মতো হয়তো সে বলতে থাকে, ‘নিশিতে যাইও আমারে দেখিতে সই গো…’