• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

বছরে ১২ হাজার কোটি টাকার উত্পাদনশীলতা ক্ষতি

আপডেটঃ : শনিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৮

অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে বাংলাদেশের মানুষের যে উত্পাদনশীলতা নষ্ট হচ্ছে তার আর্থিক পরিমাণ বছরে দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি বলে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূলত অনিরাপদ খাদ্যজনিত রোগে মানুষের এই উত্পাদনশীলতা নষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘দ্য সেফ ফুড ইমপারেটিভ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমনটি উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলো অনিরাপদ খাদ্যের কারণে অর্থনৈতিকভাবে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, অনিরাপদ খাদ্যের কারণে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলো বছরে ১১০ বিলিয়ন ডলারের উত্পাদনশীলতা হারাচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বিশেষ করে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, নিয়ন্ত্রণকাঠামো শক্তিশালী করা এবং অভ্যাসগত পরিবর্তনের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিশ্বে এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোতে অনিরাপদ খাদ্যজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। এজন্য এসব অঞ্চলে জনস্বাস্থ্য খাতে রোগ সারাতে সরকারকে ব্যয় করতে হচ্ছে। এসব দেশ থেকে খাদ্য রপ্তানির পরিমাণও কম।
প্রতিবেদেনে ২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে একটি তালিকা করা হয়েছে। ২৮টি দেশের মধ্যে উত্পাদনশীলতা ক্ষতির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় ক্ষতির দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া। এর পরে রয়েছে নাইজেরিয়া, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা রয়েছে তালিকার ২৫তম অবস্থানে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অনিরাপদ খাদ্য পুষ্টি নিরাপত্তাকে বাধাগ্রস্ত করে। সেইসাথে মানব উন্নয়ন এবং বৃহত্ অর্থে খাদ্য-অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করে। অনিরাপদ খাদ্যের ফলে আর্থিক ক্ষতি নিরূপণে বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করেছে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে শুধু উত্পাদনশীলতার ক্ষতি হচ্ছে ৯৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। সেইসাথে অসুস্থতাজনিত কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। এর পাশাপাশি খাদ্য রপ্তানিতেও ক্ষতি হচ্ছে। সেইসাথে পরিবেশগত ঝুঁকি এবং অপচয়ও রয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বে প্রতিদিন অনিরাপদ খাদ্যের কারণে গড়ে ২০ লাখ মানুষ অসুস্থ হয়। এর ফলে তারা স্কুলে বা কাজে যেতে পারে না। এদের মধ্যে অনেকেই চিকিত্সা ব্যয় মেটাতে পারে না। মাঝে মধ্যে তাদের জীবন পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বিশ্বের নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর ৪১ ভাগ বাস করছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে। কিন্তু অনিরাপদ খাদ্যের কারণে ৫৩ ভাগ অসুস্থ হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষ। শুধু তাই নয়, এই ধরনের অসুস্থতায় যারা মৃত্যুবরণ করছে তার ৭৫ ভাগ এই অঞ্চলের বাসিন্দা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক তথ্যানুযায়ী ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৬০ কোটি মানুষ খাদ্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করেছে জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তন করে স্বল্প খরচের মাধ্যমেই এই ধরনের ক্ষতি অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। দেশের মানুষের উত্পাদনশীলতার পূর্ণ ব্যবহার করতে হলে খাদ্য নিরাপত্তায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ