আনুষ্ঠানিক সংলাপ নয়, অনানুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য বিএনপিকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে প্রক্রিয়া যাই হোক না কেন—বর্তমান কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সভায় দেশের সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি ইসির দেওয়া চিঠির বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন। তারা বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন কিছুই করতে পারবে না। যদি না সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সংলাপ হলে বিএনপি সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবে। তা ছাড়া কোনো সংলাপে দলটি যাবে না। আজ বুধবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।
স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য কালবেলাকে বলেন, বর্তমান সরকার আবারও ভোট ডাকাতি করতে নতুন কৌশল নিয়েছে। তার মধ্যে লেটেস্ট কৌশল হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের চিঠি দেওয়া। তবে বিএনপি কোনো সংলাপে যাবে না এবং সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেবে না।
এদিকে বিএনপি মহাসচিবের কাছে পাঠানো চিঠির বিষয়ে কথা বলেছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সংলাপ একটি আনুষ্ঠানিক বিষয়। আমরা তাদের (বিএনপি) সংলাপে ডাকিনি। তবে চিঠির মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার জন্য তাদের আহ্বান জানানো হয়েছে’।
বিএনপিকে চিঠি দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে সিইসি বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমে দেখলাম অনেকে লিখেছেন, বিএনপিকে চিঠি দেওয়া সরকারের কূটকৌশল। তবে আমি বলছি, বিএনপিকে চিঠি দেওয়ার পেছনে সরকারের কোনো কূটকৌশল নেই; বরং এটা ইসির কূটকৌশল হতে পারে। সরকার ইসির ওপর চাপ দিলে যে দেবে যাবে, বিষয়টি তেমন না। এখানে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সরকারের আজ্ঞাবহ কোনো কাজ নির্বাচন কমিশন করে না।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘বিএনপির মতো একটি দলকে নির্বাচনে আনতে পারলে ভালো হয়। সেজন্যই ডেকেছি, অনানুষ্ঠানিকভাবে ডেকেছি। কোনো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর চাপে বিএনপিকে ডাকা হয়নি। নির্বাচন কমিশনাররা বসেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ বিএনপি বলেছে, এই আমন্ত্রণপত্র দেওয়ার বিষয়টি সরকার এবং ইসির নাটক। আলোচনা যদি হতেই হয় তবে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েই হতে পারে—এই বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘আমি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একটি পত্র দিয়েছি। তাই তাদের যে কোনো বক্তব্য আমাদের কাছে যদি পত্রের মাধ্যমে আসে, সেটিই কাঙ্ক্ষিত।’
আলোচনা কী নিয়ে হবে, তাদের দাবি তো একটাই, নির্বাচনকালীন সরকার—এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই আইন সচিব বলেন, ‘আমি এই প্রশ্নের উত্তর এখনই দিতে চাচ্ছি না। কথা হচ্ছে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। উনারা যদি আসেন, কী আলোচনা করব সেটা সময়ই বলে দেবে। আলোচনার মধ্যেই ফুটে উঠবে উনারা কী বললেন, আর আমরা কী বলব। আগাম কোনো বক্তব্য বা আগাম কোনো ধারণাও আমি দিতে পারছি না।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এক পত্রের মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিবকে আলোচনা ও মতবিনিময়ের আমন্ত্রণ জানান। গত বছরের মাঝামাঝিতেও ইসি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিল। তখন ৩৯টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৭টি সংলাপে অংশগ্রহণ করেছিল। তবে বিএনপি ও তাদের মিত্রসহ ১২টি রাজনৈতিক দল সেই সংলাপে অংশ নেয়নি।