ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের ব্যাঙ্গালুরুতে ২০২১ সালের মে মাসে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এক বাংলাদেশি তরুণী। টিকটক রিদয় নামের এক বাংলাদেশি বখাটে তার বন্ধুদের নিয়ে ভারতের মাটিতে এমন হীন কাজ করেছিলেন।
প্রায় দুই বছর আগে ব্যাঙ্গালুরুতে নির্যাতনের শিকার ওই তরুণীকে এবার সর্বোচ্চ ৭ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ব্যাঙ্গালুরুর একটি দায়রা আদালত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বুধবার (৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটির তথ্য অনুযায়ী, কর্ণাটক রাজ্য; এমনকি পুরো ভারতের ইতিহাসে এবারই প্রথমবার স্বদেশীদের হাতে ধর্ষণের শিকার হওয়া তরুণীকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালত বলেছেন, ভারতের নির্ভয় ফান্ড থেকে ৭ লাখ রুপি নির্যাতিতা তরুণীকে দিতে হবে।
ওই তরুণী আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন। যখন তাকে পাচার করা হয় তখনও প্রাপ্ত বয়স্ক হননি তিনি। চক্রটির হাতে তিনি যৌন নিগ্রহ ও ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। ওই তরুণীর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে ভারতীয় পুলিশই ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এরপর ২০২২ সালের মে মাসে অপর এক নারীর সঙ্গে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। দায়রা আদালত মে ২০২২ আদেশে বলেছিলেন, ‘এ অপরাধের তীব্রতা এবং আদালতের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নির্যাতিতা তরুণী জাতীয় আইন সহায়তা কর্তৃপক্ষের (নালসা) ক্ষতিপূরণ স্কিমের আওতায় ৭ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য।’ আইন অনুযায়ী তাকে এ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়।
আদালত তাৎক্ষণিকভাবে ওই তরুণীকে ক্ষতিপূরণের অর্থ বুঝিয়ে দিতে বিভাগীয় আইন সহায়তা কেন্দ্রকে নির্দেশ দেন। কিন্তু যেহেতু নির্যাতিতা ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন ফলে তাকে ভিডিও কলের মাধ্যমে হাজির করে ই-পেমেন্টের মাধ্যমে অর্থ বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
এখন তালাস অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি মানবাধিকার সংস্থা এই অর্থ ওই তরুণীর কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তালাস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সীমা দিয়ান সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, তালাস ওই তরুণীকে দেশে ফেরত পাঠাতে এবং অভিযুক্ত ১২ ধর্ষক ও সহায়তাকারীদের খুঁজে বের করতে সহায়তা করেছে এবং এখন নির্ভয় ফান্ডের মাধ্যমে তাকে ক্ষতিপূরণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩০০ অবৈধ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাতে পুলিশকে সহায়তা করেছে তালাস।
এদিকে ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে কিশোরগঞ্জে নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন এবং জীবনে যেসব ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে সেগুলোর মানসিক যন্ত্রণা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন।
ওই তরুণী আরও জানিয়েছেন, তাকে ৪০ হাজার রুপিতে একটি পার্লারে কাজ দেওয়ার কথা বলে ব্যাঙ্গালুরুতে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে অবৈধপথে কোলকাতায় যান তিনি। সেখানে আধার কার্ড তৈরি করে ও নাম পরিবর্তন করে তাকে ব্যাঙ্গালুরুতে নিয়ে যাওয়া হয়।