জার্মানিতে একটি গ্রামের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সিরিয়ার এক শরণার্থী। তার নাম রায়ান আলশেবল। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ মারাত্মক রূপ নেওয়ার পর জীবন বাঁচাতে জার্মানিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।
সম্প্রতি তিনি মেয়র নির্বাচিত হন এবং সম্ভবত তিনিই প্রথম সিরীয় শরণার্থী যিনি সরকারি কোনও পদের জন্য নির্বাচিত হলেন। বুধবার (৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় বসবাসের সময় ২০০৯ সালে টেলিভিশনে বায়ার্ন মিউনিখের ফুটবল ম্যাচ দেখে জার্মানি সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন রায়ান আলশেবল। এর কয়েক বছর পর সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ বেঁধে যায় এবং এই ঘটনা তাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। শেষে আশ্রয় পান জার্মানিতে।
আজ রায়ান আলশেবল কেবল একজন জার্মান নাগরিকই নন বরং তিনি ওস্টেলশেইম নামে জার্মানির একটি গ্রামের নির্বাচিত মেয়রও। জার্মান এই গ্রামটি দেশটির স্টুটগার্ট শহরের কাছে অবস্থিত এবং জনসংখ্যা আড়াই হাজার। সম্ভবত রায়ান আলশেবলই প্রথম সিরীয় শরণার্থী যিনি জার্মানিতে কোনও সরকারি পদের জন্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেন।
২৯ বছর বয়সী এই তরুণ মেয়র বলছেন, ‘এটি (জার্মানি) একটি উদারপন্থি দেশ। এখানে যে কেউ কিছু করতে চাইলে, সে তা করার সুযোগ পাবে।’
রয়টার্স বলছে, আলশেবল ২১ বছর বয়সে একদল বন্ধুর সাথে জার্মানিতে এসেছিলেন। তিনি সেই কয়েক হাজার শরণার্থীর মধ্যে একজন যারা সিরিয়া থেকে জার্মানির উদ্দেশে পালিয়ে আসার পর তৎকালীন চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল ২০১৫ সালে দেশের সীমান্ত উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
রায়ান আলশেবল জার্মান ভাষা শিখেছেন। আরবি নিজের মাতৃভাষা হলেও আলশেবলের কাছে জার্মান ভাষা যেন আরও সহজ। এছাড়া আলশেবল ওস্টেলহেইমের কাছে আলথেংস্টেট টাউন হলে ইন্টার্নশিপও করেন। আর সেখানেই তিনি প্রথম বুঝতে পারেন ঠিক কীভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে।
সিরিয়ায় ফাইন্যান্সিং ও ব্যাংকিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন রায়ান আলশেবল। তিনি বলছেন, ‘(জার্মানিতে আসার পর) আমি মেয়রকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, আমি এখানে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিতে পারি কিনা। পরে আমি আবেদন করি এবং সাক্ষাৎকার দেই। পরে আমি এখানে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাই।’
রয়টার্স বলছে, তিন বছরের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ শেষে টাউন হলে প্রশাসনিক ক্লার্ক হিসাবে চাকরি পান রায়ান আলশেবল। আর এরপরই তিনি তার পরবর্তী লক্ষ্যের জন্য পরিষ্কার দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ করেন। আর তা হলো: মেয়র হওয়া।
আলশেবল বলছেন, ‘আমার প্রশিক্ষণের প্রথম বছরে, আমি জানতাম যে আমি এটি হবো, কিন্তু প্রশ্ন ছিল- কখন।’
বার্তাসংস্থাটি বলছে, সিরীয় শরণার্থী নতুন এই মেয়র গত রোববার ৫৫.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে পৌরসভা নির্বাচনে জয়ী হন। নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আরও দু’জন প্রার্থী ছিলেন। এই তিনজনই দলীয় কোনও সম্পর্ক ছাড়াই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন।
রায়ান আলশেবল বলছেন, ওস্টেলশেইম একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ স্থাপন করেছে এবং এক অর্থে ইতিহাসও সৃষ্টি করেছে। সিরিয়ায় তিনি এমন সম্ভাবনা কখনও পাননি জানিয়ে আলশেবল বলেন, মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় তার পরিবার খুব খুশি। তবে তারা বিস্মিত হয়েছে।
চলতি বছরের জুন মাসে নতুন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন আলশেবল। আর তার এজেন্ডায় সবচেয়ে ওপরে যে বিষয়টি রয়েছে তা হলো- সারাদিনের জন্য নার্সারি পুনরায় চালু করার মাধ্যমে শিশুদের যত্নের আরও উন্নতি করা।
নিজে জার্মান বোধ করেন কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে আলশেবল উত্তর দেন, ‘আপনি জার্মান বোধ করেন কেমন? আমি খুব খুশি যে আমি জার্মানিতে আছি এবং আমি সত্যিই জার্মানির সেবা করতে চাই… আমি মনে করি, আমি এখানকার সমাজের অন্তর্ভুক্ত।’