• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

নতুন শব্দের উদ্ভাবন করলেন মমতা, কী সেই শব্দ?

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ফাইল ছবি)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আবারও নতুন একটি শব্দের উদ্ভাবন করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে কথা বলার সময় নতুন শব্দ উদ্ভাবনের কথা তিনি নিজেই জানান। তবে প্রশ্ন উঠছে, এভাবে কি নতুন শব্দবন্ধের নির্মাণ করা যায়?

গত বুধবার পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় প্রেস ক্লাবের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে তিনি একটি নতুন শব্দের ব্যবহার করেন। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন থেকে তৈরি হওয়া নতুন এই শব্দ হচ্ছে- ‘শুভনন্দন’।

সেদিনের বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘আপনাদের সকলকে শুভ নব বৈশাখের শুভনন্দন জানাচ্ছি। আমরা কথায় ব্যবহার করি অভিনন্দন। আমি আজ থেকে শুরু করলাম শুভনন্দন।’

এর ব্যাখ্যায় মমতা বলেন, ‘নতুন নতুন কথার আমদানিও তো করতে হবে। শুভকামনা, অভিনন্দন যদি হতে পারে, তা হলে শুভনন্দন কেন হতে পারে না? এতে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন দুটোই আছে। নান্দনিক বলতে পারেন।’

মুখ্যমন্ত্রীর নতুন শব্দ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্সি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নতুন শব্দে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। তার লেখা ও বলা,দুটোই উদ্ভট।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১২৫টির বেশি বই ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখাকে স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলা আকাদেমি। কিন্তু মমতার কবিতায় ব্যবহৃত ‘এপাং ওপাং ঝপাং’ জাতীয় শব্দের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে বারবার।

এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্যে শ্লেষ ধরা পড়েছিল। একটি গ্রন্থাগারের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘কবিতার প্রথম লাইন এপাং ওপাং ঝপাং, আমরা সবাই ড্যাং ড্যাং। এই যদি কবিতার বই হয়, কেউ পড়বে?’

অবশ্য ‘শুভনন্দন’ প্রথম নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্ট শব্দ বা নামকরণ নিয়ে অতীতেও বিতর্ক হয়েছে। প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় থাকতেন বিশপ লেফরয় রোডে। মুখ্যমন্ত্রী তার নাম দেন ‘সত্যজিৎ রায় ধরণী’। প্রশ্ন উঠেছিল, ‘সরণী’র বদলে ‘ধরণী’ কোন অর্থ বহন করে?

যে কোনও ভাষার ভাণ্ডারে নিয়মিত নতুন শব্দ সংযোজিত হয়। অনেকে ‘শুভনন্দন’কে সেই দৃষ্টিতে দেখছেন। ভাষাবিদ ড. পবিত্র সরকার বলেন, ‘লেখকরা নতুন শব্দ তৈরি করেন। মুখ্যমন্ত্রী তো লেখেন। তিনি নতুন শব্দ যোগ করতেই পারেন। তবে সত্যজিৎ রায় ধরণী, উপান্ন-র মতো প্ৰয়োগ আমাদের তেমন পছন্দ হয়নি। শুভনন্দন কথাটায় দোষ দেখি না। মানুষ চাইলে এটা নেবে।’

সত্যজিৎ রায়ের পিতা কবি সুকুমার রায় তার ছড়ায় নানা মজাদার শব্দ ব্যবহার করেছেন। বকচ্ছপ, হাতিমি বা হাঁসজারু দু’টি শব্দ জুড়ে তৈরি হয়েছে। ড. সরকারের মতে, ‘শুভনন্দন’ জোড়কলম শব্দ।

মুখ্যমন্ত্রী নতুন ভবন, পার্ক থেকে নবজাতক, অনেক কিছুরই নামকরণ করে থাকেন। নবান্ন, কন্যাশ্রী, খাদ্যসাথী, দুয়ারে সরকার, রাস্তাশ্রী, এমন কত নাম। ফ্লাইওভারের নাম দিয়েছেন ‘মা’। সরকারি ভবনের নাম ‘উত্তীর্ণ’। নির্মীয়মাণ প্রেক্ষাগৃহের নাম ‘ধনধান্য’।

‘উপান্ন’ নামের অর্থ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এ বার ‘শুভনন্দন’ নিয়ে জলঘোলা হোক, এমনটা চাইছেন না সাহিত্যিক অমর মিত্র। তিনি বলছেন, ‘শব্দটা শুনতে ভালোই লাগছে। তবে কতটা শুদ্ধ জানি না। এতে কোনও বিদ্বেষ প্রকাশ পাচ্ছে না। তাই আপত্তি নেই। তবে সাহিত্যে এসব শব্দের ব্যবহার হয় না।’

শব্দ নতুন হলেও তাতে ব্যাকরণের অনুমোদন লাগে। কিন্তু সন্ধির নিয়মে কি উত্তীর্ণ হচ্ছে শুভনন্দন? ‘শুভ’ ও ‘নন্দন’ শব্দ দু’টি সন্ধি করলে বিভক্তি অনুযায়ী নতুন শব্দটি হয় ‘শুভানন্দন’।

ব্যাকরণের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কোনও শব্দের সামাজিক স্বীকৃতি বা গ্রহণযোগ্যতা। এমনটাই মনে করেন সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘অনেক ভুল শব্দ বাংলায় ব্যবহৃত হয়। যেমন ধরুন দুর্ভাগ্যজনক বা রোমিও। কিন্তু এগুলো চালু হয়ে গেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ‘ধরণী’ সেই স্বীকৃতি পায়নি। ‘শুভনন্দন’ পায় কি না দেখতে হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ