নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় বিএনপির হাইকমান্ড। তবে যে কোনো মুহূর্তে নির্বাচন হতে পারে, এমন প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি। সে ক্ষেত্রে রমজান মাসকে কাজে লাগাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা ছিল। স্বাভাবিকভাবে ঈদ উদযাপনও করতে পারেনি মানুষ।
তাই এবার রোজায় লাগাতার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। সারা দেশে বিভাগ ও জেলাভিত্তিক সমন্বিতভাবে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে পূর্বঘোষিত ১০ দফা দাবিতে কর্মসূচিও অব্যাহত রয়েছে। অধিকাংশ কর্মসূচিতে ভার্চুয়াল যুক্ত হয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এসবের মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এখন এলাকামুখী। তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে একাধিক ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা যারা ঢাকায় থাকেন, তারাও নিজ এলাকা ঘুরে এসেছেন। মধ্যম সারির যেসব নেতা আগামীতে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী, তারাও এলাকায় যাচ্ছেন নিয়মিত। ঈদ সামনে রেখে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতারা আরও সক্রিয় হচ্ছেন। অনেক নেতা ঈদের দিন এলাকায় দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাটানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বাদশ নির্বাচনের আগে আর মাত্র একটি ঈদ রয়েছে। সেটি কোরবানির ঈদ। তাই এবারের ঈদকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে নিয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তারা ঈদ উপহার বিতরণের পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ে ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে গণসংযোগ করছেন, চা-চক্রসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও চোখে পড়ছে ঈদের শুভেচ্ছা সংবলিত নানা রঙের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। কেউ কেউ ব্যবহার করছেন ডিজিটাল মাধ্যম। কেউ কেউ ইতোমধ্যে নিজ এলাকায় জাকাতের কাপড়, টাকাসহ ঈদসামগ্রী তুলে দিয়েছেন গরিবের হাতে। কেউ কেউ প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তা পাঠিয়েছেন।
জানা যায়, রাজনৈতিক সমঝোতা না হওয়া বা নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রচার থেমে নেই। হামলা-মামলা উপেক্ষা করে নানা কৌশলে নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে প্রচার চালাচ্ছেন অনেকে।
যেসব আসনে অতীতে দলের সিনিয়র নেতারা নির্বাচন করেছেন; কিন্তু বার্ধক্যজনিত ও অন্যান্য কারণে এখন আর সক্রিয় নন, সেসব এলাকায় অপেক্ষাকৃত তরুণরা মনোনয়ন লাভের প্রত্যাশায় প্রচার চালাচ্ছেন। যাদের বেশিরভাগই সাবেক ছাত্রনেতা। তাদের দাবি, বেশকিছু আসনে বিএনপির সাবেক এমপি মারা গেছেন। অনেকেই দলীয় প্রার্থী হয়েও জয়ী হতে পারেননি। অনেকেই দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় এবং বিদেশে থাকেন। সেসব এলাকায় তারা কৌশলে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। নবীনদের প্রার্থী করার ব্যাপারে বিএনপির হাইকমান্ডও ইতিবাচক।