তীব্র গরমে জনজীবনে নাভিশ্বাস। প্রতিদিনই বাড়ছে তাপমাত্রা। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হচ্ছে সতর্কবার্তা। ৩৮-৩৯ ডিগ্রিতে ঘুরপাক খাওয়া এ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত ছোঁয়ার পূর্বাভাস সংস্থাটির। সঙ্গে আর্দ্রতা কম থাকায় বাইরে বের হওয়াই যেন দায়! দিন-রাত ঘরে-বাইরে হাঁসফাঁস অবস্থায় একটু স্বস্তি পেতে চাহিদা বেড়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এয়ারকন্ডিশনারের (এসি)।
আমদানিকারক, প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও রাজধানীতে বেশ কিছু বিক্রয়কেন্দ্র ঘুরে জানা যায়, রাজধানীতে গত কয়েকদিনে এসির বিক্রি প্রায় বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
এসির প্রধান বাজার স্টেডিয়াম মার্কেট, কারওয়ান বাজার ও মালিবাগে সরেজমিনে দেখা যায়, এসির শোরুমগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়। এর মধ্যে ঈদের কারণেও অনেকে এসি কিনছেন। কাউকে কাউকে বুকিং দিয়ে যেতেও দেখা যায়। কেউ আবার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসির দরদাম শুনছেন কেনার উদ্দেশ্যে। সাধ্যের মধ্যে দাম আর মান সমন্বয় করে কিনছেন পছন্দের এসি। এ সুযোগে ক্রেতা আকর্ষণের জন্য নগদ মূল্য ছাড়ের পাশাপাশি নানান অফার দিচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড। রাখছে কিস্তি সুবিধাও।
দেশের বাজারে এসি বিক্রি করে এমন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভিশন, ওয়ালটন, স্যামসাং, জেনারেল, গ্রি, ইউনিটেক, তোশিবা, কনিয়ন, কনকা, মিনিস্টার, সিঙ্গার, হিটাচি, ট্রান্সটেক, শার্পসহ বিভিন্ন কোম্পানি। এর মধ্যে ব্র্যান্ড ও মানভেদে এক টন, দেড় টন ও দুই টনের এসি কেনা যাচ্ছে ৩৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে।
মালিবাগে সিঙ্গার শোরুমের ইনচার্জ ফরিদুল রেজা বলেন, প্রতি বছরই গরমে এসির চাহিদা ও বিক্রি বাড়ে। তবে এবার গরমের তীব্রতা বেশি হওয়ায় চাহিদা একটু বেশি। গত কয়েকদিন খুব ক্রেতা আসছে। গত বছরের তুলনায় বিক্রিও বেড়েছে।
আরও কয়েকজন বিক্রেতা জানান, মার্চের প্রথম থেকেই এসি বিক্রি শুরু হয়েছে। এপ্রিলের শেষ দিকে বিক্রি ব্যাপকহারে বেড়েছে। তবে এবছর গত তিনদিনে বিক্রি অনেক বেশি, যা আরও দেড় দুই সপ্তাহ পরে হয়। যেহেতু এপ্রিলে বিক্রি ব্যাপকহারে বেড়েছে, মে মাসে এসি বিক্রি আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা।
স্টেডিয়াম মার্কেটের ক্রেতা শাহিন আক্তার বলেন, যে গরম পড়েছে তাতে বাচ্চারা খুব অস্বস্তিতে রয়েছে। তাপমাত্রা প্রতিদিনই বাড়ছে। বাসায় আব্বা-আম্মাও অসুস্থ। তারা এ গরমে আরও অসুস্থ হয়ে গেছেন। তাই এসি ছাড়া উপায় দেখছি না।
তিনি বলেন, ঈদের কেনাকাটা কমিয়ে বাধ্য হয়ে এসি কিনতে এসেছি। মান ও দাম যাচাই-বাছাই করছি। কারণ এসি তো আর একদিনের জন্য নয়। পছন্দ আর দাম মিললে কিনবো। কিস্তি সুবিধাও দেখছি। দেখি কী হয়।
বিক্রি বিষয়ে ওয়ালটন এয়ার কন্ডিশনের হেড অব সেলস মুহাইমিনউল বারী বলেন, আমাদের বিক্রি গত তিনদিনে বুস্ট করেছে। মার্চের যে কোনো সপ্তাহের চেয়ে সেটা প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। এভাবে বিক্রি হলে চলতি মাসে বিক্রি মার্চের থেকে দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, এখন এসি প্রয়োজনীয় পণ্য হয়ে গেছে। বিলাসীপণ্য নয়, এটি জীবনযাপনের অপরিহার্য অংশ। কারণ গরমে স্বস্তি পেতে মধ্যবিত্তরাও এখন এসি কিনছেন।
বাড়তি ক্রেতা টানতে বিশেষ মূল্যছাড় দিয়েছে অনেক কোম্পানি। কোনো কোনো ব্র্যান্ড আবার বিক্রি বাড়াতে ঈদে স্ক্রাচকার্ড ও গিফট দিচ্ছে। এছাড়া ফ্রি ডেলিভারিসহ বিনামূল্যে এসি ইনস্টল করে দেওয়া হচ্ছে।
দেশে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ পিস এসির চাহিদা রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশের এসি আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর সংগঠনের সভাপতি ও সুপ্রিম এয়ারকন্ডিশনিং কোম্পানির সিইও এম লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, দেশে এ চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ আমদানি ও ৪০ শতাংশ দেশি কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে পূরণ হচ্ছে। তবে দিন দিন আমদানি কমে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে।
এম লুৎফর রহমান আরও বলেন, এখন গরমের কারণে বাজারে ৩০ শতাংশের মতো বিক্রি বেড়েছে। আর দেশে যে এসির চাহিদা রয়েছে তার প্রায় ৬০ শতাংশ এপ্রিল থেকে জুনে বিক্রি হচ্ছে। বাকিটা হচ্ছে বছরের অন্য সময়ে।