ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের প্রয়াগরাজে পুলিশ পাহারায় থাকা অবস্থায় আততায়ীদের হাতে খুন হয়েছেন বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরাফ। যোগী আদিত্যনাথ রাজ্য সরকারের পুলিশ অবশ্য ‘গ্যাংস্টার’ হিসেবে তাদেরকে গ্রেফতার করেছিল। সেই পুলিশের উপস্থিতিতেই তাদের হত্যা করা হয়। যোগী সরকার নির্দেশ দিয়েছে, এই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত করবে তিন সদস্যের কমিটি। এছাড়া প্রয়াগরাজসহ উত্তরপ্রদেশের সব জেলায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। এর মাত্র দু’দিন আগে আতিক আহমেদের ছেলে আসাদ নিহত হন ‘এনকাউন্টারে’।
পুলিশের ভাষ্যে বলা হয়েছে, শনিবার রাতে আতিক এবং আশরফকে মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। হাসপাতালের পথে হাঁটতে হাঁটতে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছিলেন আতিক। ওই সময়ই আচমকা আতিকের মাথায় গুলি লাগে। লুটিয়ে পড়েন আতিক। তার পর তাকে ও আশরাফকে ঘিরে ধরে গুলি চালাতে থাকে দুষ্কৃতিকারীরা। সেখানেই দু’ভাইয়ের মৃত্যু হয়। পুলিশ তিন দুষ্কৃতিকারীকে ধরেছে। উদ্ধার হয়েছে খুনে ব্যবহৃত বন্দুকটিও। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, আততায়ীরা সাংবাদিকের ছদ্মবেশে এসেছিলেন। আতিক এবং তার ভাইকে খুনের পর তিন দুষ্কৃতিকারী স্লোগান দিতে থাকে। তখন পুলিশ তাদের ধরে ফেলে।
শনিবার ছেলের শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকার কথা জানিয়ে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন আতিক। কিন্তু তার আইনজীবী মণীশ খন্না পিটিআইকে জানান, ১৪ এপ্রিল অম্বেদকর জয়ন্তীর ছুটি থাকার কারণে আতিকের আবেদনপত্রটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়। শনিবার ওই আবেদন মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়। তার আগেই অবশ্য আসাদের দাফন সম্পন্ন হয়ে গেছে। আসাদ ছিলেন আতিকের তৃতীয় পুত্র। উমেশ পাল হত্যা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত আসাদ এবং তার সঙ্গী গুলাম উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সাথে ‘এনকাউন্টারে’ নিহত হয়।
অন্য দিকে, প্রয়াগরাজে এই ঘটনার পর উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেল। আতিকের মতো এরকম ‘হাই প্রোফাইল’ বন্দিকে হাসপাতালে মেডিক্যাল করাতে নিয়ে যাওয়ার পথে এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন এসপি প্রধান অখিলেশ যাদব। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘উত্তরপ্রদেশ অপরাধের পরাকাষ্ঠা হয়ে উঠেছে। অপরাধীদের মনোবল আরো মজবুত হচ্ছে। যখন পুলিশের ঘেরাটোপে থাকা একজনকে এভাবে খুন করা যেতে পারে তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? মানুষের মধ্যে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, কিছু মানুষ সব জেনে বুঝে এমন বাতাবরণ তৈরি করছেন।’
ভারতীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়, এসপির সাবেক এমপি আতিকের বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন থানায় ছিল শতাধিক মামলা। ২০০৫ সালে বিএসপি বিধায়ক রাজু পালের খুনে নাম জড়িয়েছিল আতিকের। ফেব্রুয়ারিতে রাজু খুনের প্রত্যক্ষদর্শী উমেশ পালের হত্যাকাণ্ডেও মূল অভিযুক্ত ছিলেন আতিক।
গত বৃহস্পতিবার আতিকের পুত্র আসাদ এবং তার এক সঙ্গীকে গুলি করে পুলিশ। আতিকের কনভয়ে হামলা করার পরিকল্পনা ছিল আসাদের, এমনটাই পুলিশ সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে। মামলার কারণে আতিককে ঘনঘন গুজরাতের সাবরমতী জেল থেকে প্রয়াগরাজে, আবার প্রয়াগরাজ থেকে সাবরমতী নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
এমন ভয়ঙ্কর ঘটনার নিন্দা করেছেন মিম প্রধান আসাদ উদ্দিন ওয়েসি। তিনি টুইট করেছেন, পুলিসি হেফাজতে থাকা অবস্থায় খুন করা হয়েছে আতিক ও তার ভাইকে। খুনের পর জয় শ্রীরাম স্লোগানও দেওয়া হয়েছে। এই খুন যোগীর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সম্পূর্ণ ব্যর্থতার নজির। যারা এনকাউন্টারে খুশি হন তারও এই ঘঠনায় সমান দায়ী। যেখানে মানুষ এনকাউন্টারে খুশি হয় সেখানে আইনের প্রয়োজন কী?