• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৬ অপরাহ্ন

সুদান সংকটে ইসরাইলের ভূমিকা.

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সুদানে যখন সেনা ও আধা-সামরিক বাহিনী(আরএসএফ)এর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে তখন ইহুদিবাদী ইসরাইল সুদানি জেনারেলদেরকে শান্তি আলোচনায় বসার জন্য তেলআবিব সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তেলআবিবের পক্ষ থেকে সুদানি সেনাবাহিনীর কমান্ডার আব্দুল ফাত্তাহ আল-বোরহান এবং আধা-সামরিক বাহিনী(আরএসএফ)এর কমান্ডার মোহাম্মদ হামদান দোগালু এর মধ্যে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

সুদানের ক্ষমতাসীন সেনা বাহিনীর কর্মকর্তারা গত কয়েক বছর ধরে আমেরিকার নীতি ও ইচ্ছা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শাসন ক্ষমতায় নিজেদের অবস্থানকে আরো পাকাপোক্ত করেছে এবং আমেরিকা ও তার মিত্রদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়েছে। আমেরিকার কাছ থেকে এই আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে সুদানের সামরিক সরকারের কর্মকর্তারা ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয় এবং সে অনুযায়ী খার্তুম ও তেলআবিবের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাস্তবতা হচ্ছে, উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে বিপুল খনিজ সম্পদ রয়েছে এবং ভূকৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকার কারণে বহু দশক ধরে মুসলিম এ দেশটির ওপর ইসরাইলের লোলুপ দৃষ্টি ছিল। ইসরাইল সবসময়ই সুযোগমতো সুদানের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে সুদানের ব্যাপারে তাদের লক্ষ্য হাসিলের চেষ্টা করে এসেছে। যেমন, সুদানকে দুইভাগ করে দক্ষিণ সুদানকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রে ইসরাইলের ভূমিকা ছিল। দক্ষিণ সুদান স্বাধীন হওয়ার সময় জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সেসময় জানিয়েছিলেন ইসরাইল দক্ষিণ সুদানের বিচ্ছিন্নতাকামীদেরকে অস্ত্র সরবরাহ করতো যে কারণে আফ্রিকার ওই দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলে। ওই যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সুদানকে বিভক্ত করে ফেলে।

আলজেরিয়ায় সুদানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত এসাম আওয়াজ মোতাওয়ালি দক্ষিণ সুদান স্বাধীন হয়ে যাওয়ার পেছনে ইসরাইলকে দায়ী করে বলেছেন, দক্ষিণ সুদান ছাড়াও সুদানের মূল ভূখণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ দারফুর এলাকাসহ আরো অনেক এলাকাকে বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য ইসরাইল চেষ্টা করেছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।

বাস্তবতা হচ্ছে, ইসরাইল গত বেশ ক’বছর ধরে সুদানের আর্থ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংকট চলার সুযোগ নিয়ে ওই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়। জার্মান গণমাধ্যম ডয়েট সেভেলের ওয়েব সাইটে এক নিবন্ধে বলা হয়েছে তেলআবিবের জন্য সুদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সুদানের মাধ্যমে ইসরাইল আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাবে। যদিও সুদানের জনগণ সেদেশে ইসরাইলের প্রভাব বিস্তারের প্রচণ্ড বিরোধী। সুদানের একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওয়ালিদ আল আওয়াজ মনে করেন ইসরাইলের সাথে সুদানে বোরহানের নেতৃত্বে বর্তমান ক্ষমতাসীন সেনা শাসকদের সখ্যতা দেশের জন্য মোটেই শুভকর হবে বরং সুদানে সহিংসতা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রকৃতপক্ষে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপের কারণে সুদানের পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে এবং রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে। এখন যে সংঘাত চলছে তাতে ইসরাইল অনেক লাভবান হবে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে ইসরাইলের কারসাজি রয়েছে। এ অবস্থায় বিবদমান পক্ষগুলোকে তেলআবিবে আলোচনায় বসার জন্য ইসরাইল যে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তার মূল উদ্দেশ্য ওই দেশটিতে ইসরাইলের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করা ও প্রভাব বিস্তার করা। বিশেষ করে নীল নদের জলাশয় থাকার কারণে সুদান অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ